বিশ্বাস নিয়ে কিছু কথা।

বিশ্বাস শব্দটা মাত্র তিনটি অক্ষরের সমষ্টি হলেও এর ব্যপকতা কতটা তা লিখে বা বলে শেষ করা যাবেনা। একটি মানুষ জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত বিশ্বাসের উপরই বেঁচে থাকে। কখনও নিজের উপর, কখনও পরিবারের উপর, কখনও বন্ধুদের উপর, আবার কখনও বিশ্বস্ততার উপর নির্ভরশীল হয়ে থাকে।
জীবন চলার পথে যে বিশ্বাসগুলোর ওপর দাঁড়িয়ে আমরা এগিয়ে চলি, তা কিছুতেই অবমূল্যায়ন করা যায় না। যদি একজন মানুষ তার জীবনের কোনও গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে সত্যিকার বিশ্বাস অর্জন করতে পারে, তবে সে জানে যে, জীবনের অন্যান্য সমস্ত অপূর্ণতা কিছুতেই তার জীবনের উপর বড় প্রভাব ফেলতে পারবে না।
তবে, যদি কিছু সময়ের জন্যও ওই বিশ্বাসে ছোট্ট একটি ঘাটতি দেখা দেয়, তবে আমরা অনুভব করি যে আমাদের জীবন যেন অসম্পূর্ণ। যেন, কিছু একটা আছে যা আমরা খুঁজে পাচ্ছি না।
একদিন অনলাইনে চ্যাট করার সময়, একজনকে প্রশ্ন করেছিলাম, “আপনার কয়েকটা খারাপ গুণ সম্পর্কে বলুন তো।” সে কয়েকটি গুণের সাথে একটি গুণ বলল, "আমি খুব সহজেই মানুষকে বিশ্বাস করে ফেলি।" প্রথমে বিষয়টি শুনে আমি চমকিত হলাম না, কারণ আমি জানি, এমন অনেকেই আছেন যারা এটিকে খারাপ গুণের মধ্যে ফেলবে। কিন্তু আমি মনে করি, এটি আসলে একদম সঠিকভাবে মূল্যায়ন করা উচিত নয়।
আমি বিশ্বাস করি, যদি একজন মানুষ খুব সহজেই অন্যকে বিশ্বাস করতে না পারতেন, তবে অনেক কিছুই অসম্ভব হয়ে পড়তো। যেমন, আমরা যদি অপরিচিত কাউকে বিশ্বাস না করি, তাহলে কি কখনো একজন মাঝি নদী পার করার সময় তাঁর নৌকা চালানোর দিকে মনোযোগী হতে পারতেন?
হয়তো আমরা নাপিতের কাছে চুল কাটাতে যেতাম না, কারণ তাকে বিশ্বাস না করলে তার ধারালো ব্লেডের ভয়ে তাতে যেতাম না। আমি দেখেছি, আমার বাবা মাঝে মাঝে আমাকে বাজারে পাঠাতেন, বাজার থেকে ফিরলে কখনও আমার কাছে হিসাব চাইতেন না—এটাই ছিল বিশ্বাস। সবার মধ্যে বিশ্বাস থাকে, এই বিশ্বাস ছাড়া কিছুই সম্ভব নয়। ভালবাসার জন্যেও বিশ্বাস প্রয়োজন।
অনেকে বলে, “বিশ্বাস কাচের মত, যা একবার ভাঙলে টুকরা টুকরা হয়ে যায়।” কিন্তু আমি একটু ভিন্নমত পোষণ করি। আমার মতে, বিশ্বাস হল একটি বাতাস পূর্ণ বেলুন। যদি কখনও বেলুনে ছিদ্র হয়, তবে সে বেলুনটি চুপসে যাবে, কিন্তু এটি কখনও টুকরো টুকরো হবে না।
যদি আমাদের মধ্যে অদম্য ভালবাসা এবং প্রবল ইচ্ছাশক্তি থাকে, তবে আমরা সেই বিশ্বাস পুনরায় অর্জন করতে পারব। পৃথিবীতে যেমন বিশ্বাস শব্দটি রয়েছে, তেমনি বিশ্বাস ঘাতকতা থাকাও স্বাভাবিক।
তবে, মনে রাখতে হবে, যে মানুষটি আমাদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করল, তার পেছনেও কোন না কোন বিশ্বাসই কাজ করেছে। হয়তো সে আপনার বিশ্বাস থেকে অন্য একটি বিশ্বাসকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে।
বিশ্বাস আমাদের জীবনকে শক্তি দেয়, কিন্তু কখনও কখনও কোন একটি বিশ্বাস হারিয়ে আমরা খুব ভেঙে পড়ি। কিন্তু আমাদের মনে রাখা উচিত, বিশ্বাস কখনই একটি নির্দিষ্ট ব্যক্তি, স্থান বা পাত্রের ওপর সীমাবদ্ধ নয়। পৃথিবীজুড়ে বিশ্বাস রয়েছে, আর এ বিশ্বাসের শক্তিই আমাদের নতুন করে জীবন চলার পথে সাহস দেয়।
আমাদের প্রিয়জনদের অগাধ বিশ্বাস রয়েছে আমাদের উপর, এবং আমরা যেন কখনো এমন কোন ঠুনকো বিশ্বাসের জোড়ে আমাদের প্রিয়জনদের এই বিশ্বাস নষ্ট হতে না দিই।
বিশ্বাস নিয়ে কথা বললে কথার শেষ হয় না। তবে ছোট্ট একটি গল্প দিয়ে আমি আমার কথা শেষ করতে চাই। এক গ্রামে সবাইকে বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা করতে একটি মাঠে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছিল।
সেখানে সবাই খালি হাতে গেলেও, একটি ছেলে ছাতা নিয়ে সেখানে উপস্থিত হয়েছিল। কারণ ছেলেটির বিশ্বাস ছিল যে, প্রার্থনার পর বৃষ্টি নামবেই। সত্যিকার অর্থে আমাদের সবার বিশ্বাস যেন এমনই হওয়া উচিত—আমরা যা বিশ্বাস করি, তা সঠিকভাবে হবে।
বিশ্বাস এক শক্তি, যা আমাদের জীবনের সবচেয়ে বড় সম্পদ।
এটি আমাদের আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করে, আমাদের মনোবল শক্তিশালী করে এবং আমাদের জীবনকে এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যায়। কোনো অবস্থাতেই বিশ্বাস হারানো উচিত নয়, কারণ বিশ্বাস মানুষের জীবনের আসল শক্তি।
আমরা যখন নিজেদের উপর বিশ্বাস রাখি, তখন জীবনের প্রতিটি বাঁক এবং প্রতিটি অনিশ্চয়তা আমাদের কাছে অর্থপূর্ণ হয়ে ওঠে।
আজ থেকে, বিশ্বাস করি—নিজের প্রতি, সৃষ্টিকর্তার প্রতি, এবং পৃথিবীর প্রতি।

- Book Reviews & Literary Discussions
- Writing
- Reading List
- Arts and Entertainment
- Personal Development
- Storytelling
- Startup
- Books
- Arts & Crafts
- Dance
- Drinks
- Entertainment & Pop Culture
- Health & Fitness
- Education & Learning
- Food & Cooking
- Игры
- Gardening
- Self-Care & Mental Health
- Home Decor & DIY
- Literature
- Music
- Networking
- Другое
- Party
- Philosophy and Religion
- Предложение
- Shopping
- Relationships & Dating
- Sports
- Theater
- lifestyles & hobbies/shutterbugs
- Lifelong Learning
- Tutorial
- Announcement
- Inspirational Stories & Motivation