আমার মায়ের ঘর ছিল সময়হীন

আমাদের বাড়িটা খুব বড় ছিল না, তবে মায়ের চোখের মতো প্রশান্ত ছিল। দুপুরে রোদ যখন উঠোন পেরিয়ে দরজার চৌকাঠে এসে থমকে দাঁড়াত, মা তখন পাট শাড়ির আঁচল কোমরে গুঁজে পুঁইশাক কুটতেন। পাশের ঘর থেকে বাবার তাড়া শুনতাম—“তাড়াতাড়ি করো, হাটে যেতে হবে!” আর মা বলতেন, “একটু ধৈর্য ধরো, চালডালটা ভালো করে ফুটুক, সময় তো আর পালাবে না।”
ছোটবেলায় বুঝিনি, বড় হয়ে বুঝেছি—আমার মা সময়ের লোক ছিলেন না।
স্কুলে যেতে দেরি হলে বাবা বিরক্ত হতেন। মা কেবল জামাটা গুঁজে দিতেন ব্যাগে, আর বলতেন, “না খেয়ে যেও না। বইয়ের থেকে শরীর আগে।” বাবা ছিলেন ঘড়ির দিকে তাকানো মানুষ, আর মা ছিলেন জানালার বাইরে তাকানো মানুষ। সময়ের কাঁটা বাবার মন ছুঁতো, মায়ের নয়। মা যেন ছিলেন একটা থেমে থাকা বকুলতলা—যেখানে সময় এসে বসে, হালকা বাতাসে একটু জিরিয়ে নেয়।
মাঝেমধ্যে আমি বাবার মতো সময় ধরতে চেয়েছি—দৌড়েছি, হিমশিম খেয়েছি। কিন্তু ক্লান্ত হলে মা’ই ছিলাম ফিরতি ঘর। সেই চুপচাপ রান্নাঘর, যেখানে দুপুরে ভাতের গন্ধ থাকত, আর রাতে থাকত গল্পের আলো।
সময় বদলেছে, শহর বদলেছে, আমি নিজেও বদলে গেছি। কেবল মা’কে দেখেছি একই রকম থাকতে। না, তিনি সময়ের বিরুদ্ধে যাননি; তিনি কেবল সময়কে ভয় পাননি। সময় তাঁকে পরিচালনা করেনি, তিনি সময়কে আপন নিয়মে বরন করেছেন—যেমন উঠোনে বৃষ্টি পড়ে, যেমন ভাঙা কলসিতে জল জমে।
আজও যখন হুট করে দিনটা ক্লান্ত হয়ে যায়, আমি চোখ বন্ধ করলে মায়ের রান্নাঘরের ঘ্রাণ পাই। মনে হয়, সময়টা হয়তো হারায়নি, কেবল একটু বিশ্রাম নিতে গিয়েছে মায়ের ঘরে।
- Book Reviews & Literary Discussions
- Writing
- Reading List
- Arts and Entertainment
- Personal Development
- Storytelling
- Startup
- Books
- Biography
- Dance
- Drinks
- Entertainment & Pop Culture
- Health & Fitness
- Education & Learning
- Food & Cooking
- Games
- Gardening
- Self-Care & Mental Health
- Home Decor & DIY
- Literature
- Music
- Networking
- Other
- Party
- Philosophy and Religion
- Place
- Shopping
- Relationships & Dating
- Sports
- Theater
- lifestyles & hobbies/shutterbugs
- Lifelong Learning
- Tutorial
- Announcement
- Inspirational Stories & Motivation