বেকারত্ব বাড়ছে। বেকারত্ব অবশ্য গ্রামেই অধিক, বিশেষজ্ঞরা বলেন শহরের তুলনায় দ্বিগুণ

0
137

বাংলাদেশে বেকারত্ব একটি বড় সমস্যা হিসেবে উত্থান পাচ্ছে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নতির পাশাপাশি বেকারত্বের হারও বৃদ্ধি পাচ্ছে, বিশেষত গ্রামীণ অঞ্চলে। শহরের তুলনায় গ্রামে বেকারত্বের হার দ্বিগুণ হওয়া এটি একটি গভীর সংকট, যা দেশের অর্থনীতির উপর প্রভাব ফেলছে। একদিকে যেমন শহরগুলোতে শিল্পকারখানা এবং চাকরির সুযোগ বেড়েছে, অন্যদিকে গ্রামীণ অঞ্চলে কৃষির অপ্রতুলতা এবং শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের অভাব বেকারত্বকে আরও তীব্র করেছে। এই সমস্যা সমাধানে সচেতনতা বৃদ্ধি, সরকারের কার্যকর পদক্ষেপ এবং সামাজিক সহযোগিতার প্রয়োজন।

১. বেকারত্বের বর্তমান চিত্র

বাংলাদেশে বেকারত্বের হার ক্রমেই বাড়ছে। জাতীয় পরিসংখ্যান অফিসের তথ্য অনুযায়ী, গত কয়েক বছরে বেকারত্বের হার বৃদ্ধির প্রবণতা দেখা গেছে, যার প্রধান কারণগুলো হচ্ছে অর্থনৈতিক সংকট, শ্রম বাজারে দক্ষতার অভাব, প্রযুক্তির ব্যবহার এবং শিক্ষা ব্যবস্থার অপ্রত্যাশিততা। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (BBS) রিপোর্ট অনুযায়ী, শহরে বেকারত্বের হার ৮-১০ শতাংশ হলেও, গ্রামীণ অঞ্চলে এই হার প্রায় ২০ শতাংশের কাছাকাছি পৌঁছেছে, যা শহরের তুলনায় দ্বিগুণ।

২. গ্রামীণ বেকারত্বের কারণ

গ্রামীণ এলাকায় বেকারত্বের হার বাড়ানোর জন্য বেশ কিছু কারণ দায়ী। এই কারণে শুধু শহরের শ্রমবাজারের প্রতিযোগিতা নয়, বরং গ্রামে সঠিক শিল্পকারখানা, আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি এবং পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান সুযোগের অভাবও অন্যতম। এর মধ্যে প্রধান কারণগুলো হলো:

(i) কৃষি খাতে অপ্রতুলতা

বাংলাদেশের বৃহত্তম অংশের মানুষ গ্রামীণ অঞ্চলে বাস করেন এবং কৃষি ক্ষেত্রই তাদের প্রধান জীবিকা। তবে আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির অভাব এবং অপ্রতুল আবহাওয়া অবস্থার কারণে অনেক কৃষক ভালো ফলন পেতে পারেন না। এর ফলে কৃষির প্রতি আগ্রহ কমে গেছে এবং গ্রামীণ যুবকরা কর্মসংস্থানের জন্য শহরের দিকে চলে যাচ্ছে। এছাড়াও, উন্নত কৃষি ও অন্যান্য ব্যবসা খাতে দক্ষতার অভাবও বড় একটি কারণ।

(ii) শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের অভাব

গ্রামীণ অঞ্চলের অনেক যুবকরা এখনও মৌলিক শিক্ষা বা দক্ষতা অর্জন করতে পারছেন না। আধুনিক শিক্ষা ও প্রযুক্তির সাথে সঙ্গতি রেখে তাদের দক্ষতা উন্নয়ন করার সুযোগ খুবই কম। এর ফলে, তারা অনেক সময় শহরের ব্যবসায়িক পরিবেশ বা নতুন শিল্পের সাথে তাল মিলিয়ে কাজ করতে পারে না, যা বেকারত্বের হার বাড়িয়ে দেয়।

(iii) সীমিত উদ্যোক্তা সুযোগ

গ্রামীণ এলাকাগুলোর মধ্যে উদ্যোক্তা বা ছোট ব্যবসা শুরু করার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ কম। ব্যবসার জন্য পর্যাপ্ত বিনিয়োগ, বাজার সম্পর্কিত তথ্য বা উদ্যোক্তা প্রশিক্ষণের অভাব থাকায়, নতুন উদ্যোগ সৃষ্টি কঠিন হয়ে পড়েছে। এর ফলস্বরূপ, গ্রামীণ মানুষ তাদের কর্মসংস্থানের জন্য শহরের দিকে ঝুঁকছে, ফলে শহরের কাজের বাজারে চাপ বাড়ছে এবং গ্রামীণ বেকারত্ব আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে।

৩. শহরের বেকারত্বের পরিস্থিতি

অন্যদিকে, শহরগুলিতেও বেকারত্বের সমস্যা রয়েছে। শহরের শ্রমবাজারে বিভিন্ন ধরনের চাকরি এবং সুযোগ থাকলেও, সেখানে প্রতিযোগিতা অত্যন্ত তীব্র। নতুন প্রজন্মের শিক্ষিত যুবকদের জন্য সঠিক চাকরির সুযোগ পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ছে।

(i) শিক্ষিত বেকার

বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজের ডিগ্রি অর্জন করেও অনেক শিক্ষিত যুবক তাদের পছন্দের চাকরি খুঁজে পাচ্ছেন না। সঠিক দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতা ছাড়া, শুধু শিক্ষাগত যোগ্যতা দিয়ে চাকরি পাওয়া কঠিন। শহরে কর্মসংস্থানের জন্য অতিরিক্ত প্রতিযোগিতার কারণে, অনেক তরুণ-তরুণী বেকার অবস্থায় রয়েছেন, যা বেকারত্বের হার বাড়াচ্ছে।

(ii) প্রযুক্তি এবং অটোমেশন

শহরের শিল্পকারখানায় প্রযুক্তির ব্যবহার এবং অটোমেশনের কারণে অনেক শ্রমিকের কাজ চলে যাচ্ছে। স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রপাতি ও রোবটের কারণে, ম্যানুয়াল শ্রমের চাহিদা কমে গেছে, যা শহরের শ্রমবাজারে বেকারত্বের হার বাড়াচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, যদি আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারের সাথে সঠিকভাবে প্রশিক্ষিত দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি করা না যায়, তবে বেকারত্বের সমস্যা আরও বাড়বে।

৪. গ্রামীণ বেকারত্ব কমানোর জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ

বেকারত্বের সমস্যা শুধুমাত্র শহরের একটি সমস্যা নয়, এটি গ্রামেও একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষজ্ঞরা কিছু পদক্ষেপ সুপারিশ করেছেন যার মাধ্যমে গ্রামীণ বেকারত্ব কমানো সম্ভব:

(i) কৃষি খাতে উন্নয়ন

গ্রামীণ বেকারত্ব কমানোর জন্য কৃষি খাতের উন্নয়ন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি, আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহার এবং কৃষক প্রশিক্ষণ দেয়া যেতে পারে। সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে কৃষি সম্পর্কিত বিভিন্ন প্রকল্প শুরু করা হলে, যুবকদের কৃষি খাতে উৎসাহিত করা সম্ভব।

(ii) ছোট ব্যবসা ও উদ্যোক্তা সৃষ্টি

গ্রামে ছোট ব্যবসা বা মাইক্রো উদ্যোক্তা সৃষ্টির জন্য সরকার ও বেসরকারি খাত থেকে প্রশিক্ষণ এবং ঋণ সহায়তা প্রদান করা যেতে পারে। পাশাপাশি, স্থানীয় বাজারে প্রয়োজনীয় পণ্য উৎপাদন এবং সরবরাহ বাড়ানোর জন্য উদ্যোক্তা সৃষ্টির ওপর গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন।

(iii) শিক্ষা এবং দক্ষতা উন্নয়ন

গ্রামীণ অঞ্চলে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের সুযোগ বাড়ানো এবং দক্ষতা উন্নয়ন প্রোগ্রাম চালু করলে, গ্রামীণ যুবকরা সহজে তাদের কর্মজীবন শুরু করতে পারবেন। বিশেষ করে, প্রযুক্তিগত শিক্ষা এবং কারিগরি প্রশিক্ষণের সুযোগ দিলে, তারা কর্মসংস্থান খুঁজতে সহজ হবে।

বেকারত্ব বাংলাদেশের অন্যতম বড় সামাজিক ও অর্থনৈতিক সমস্যা। বিশেষজ্ঞরা সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে গ্রামীণ বেকারত্ব কমাতে এবং উন্নয়নশীল অর্থনীতির জন্য নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে পরামর্শ দিচ্ছেন। সরকার এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর উচিত এই সমস্যা মোকাবিলায় দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া, যাতে দেশের যুবকরা তাদের কর্মজীবন গঠন করতে পারে এবং দেশের সার্বিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয়।

Pesquisar
Patrocinado
Categorias
Leia Mais
Shopping
Top 10 Eastern Star Gift Ideas: Symbolic Tokens for Members
Eastern Star, a Masonic-affiliated organization open to both men and women, holds deep symbolic...
Por Eastern Star Gift(OES) 2024-02-27 12:29:48 0 11K
Local
খলিষখালী ইউনিয়নের দুইটি কলেজ: শিক্ষার আলো ছড়ানোর উজ্জ্বল প্রতিষ্ঠান
খলিষখালী ইউনিয়ন, সাতক্ষীরার তালা উপজেলার অন্তর্ভুক্ত একটি ঐতিহ্যবাহী এলাকা, যা শিক্ষা, সংস্কৃতি...
Por Khalishkhali 2024-12-22 12:29:43 0 124
Storytelling
Navigating the Narrative Landscape: Unraveling Storytelling Pitfalls
Storytelling is an art form that has been woven into the fabric of human communication for...
Por Bookworm Omaha 2023-12-29 13:17:39 0 8K
Lifelong Learning
The Unstoppable Journey of Lifelong Learning
In an ever-changing world, the pursuit of knowledge knows no bounds. Lifelong learners are a...
Por Adila Mim 2023-09-09 13:34:14 0 10K
Reading List
Explore Your Imagination: A 10-Minute Journey into Short Stories
"Good day, everyone, and welcome to 'Explore Your Imagination: A 10-Minute Journey into Short...
Por Adila Mim 2023-09-06 06:49:06 0 11K