বেকারত্ব বাড়ছে। বেকারত্ব অবশ্য গ্রামেই অধিক, বিশেষজ্ঞরা বলেন শহরের তুলনায় দ্বিগুণ

0
145

বাংলাদেশে বেকারত্ব একটি বড় সমস্যা হিসেবে উত্থান পাচ্ছে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নতির পাশাপাশি বেকারত্বের হারও বৃদ্ধি পাচ্ছে, বিশেষত গ্রামীণ অঞ্চলে। শহরের তুলনায় গ্রামে বেকারত্বের হার দ্বিগুণ হওয়া এটি একটি গভীর সংকট, যা দেশের অর্থনীতির উপর প্রভাব ফেলছে। একদিকে যেমন শহরগুলোতে শিল্পকারখানা এবং চাকরির সুযোগ বেড়েছে, অন্যদিকে গ্রামীণ অঞ্চলে কৃষির অপ্রতুলতা এবং শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের অভাব বেকারত্বকে আরও তীব্র করেছে। এই সমস্যা সমাধানে সচেতনতা বৃদ্ধি, সরকারের কার্যকর পদক্ষেপ এবং সামাজিক সহযোগিতার প্রয়োজন।

১. বেকারত্বের বর্তমান চিত্র

বাংলাদেশে বেকারত্বের হার ক্রমেই বাড়ছে। জাতীয় পরিসংখ্যান অফিসের তথ্য অনুযায়ী, গত কয়েক বছরে বেকারত্বের হার বৃদ্ধির প্রবণতা দেখা গেছে, যার প্রধান কারণগুলো হচ্ছে অর্থনৈতিক সংকট, শ্রম বাজারে দক্ষতার অভাব, প্রযুক্তির ব্যবহার এবং শিক্ষা ব্যবস্থার অপ্রত্যাশিততা। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (BBS) রিপোর্ট অনুযায়ী, শহরে বেকারত্বের হার ৮-১০ শতাংশ হলেও, গ্রামীণ অঞ্চলে এই হার প্রায় ২০ শতাংশের কাছাকাছি পৌঁছেছে, যা শহরের তুলনায় দ্বিগুণ।

২. গ্রামীণ বেকারত্বের কারণ

গ্রামীণ এলাকায় বেকারত্বের হার বাড়ানোর জন্য বেশ কিছু কারণ দায়ী। এই কারণে শুধু শহরের শ্রমবাজারের প্রতিযোগিতা নয়, বরং গ্রামে সঠিক শিল্পকারখানা, আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি এবং পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান সুযোগের অভাবও অন্যতম। এর মধ্যে প্রধান কারণগুলো হলো:

(i) কৃষি খাতে অপ্রতুলতা

বাংলাদেশের বৃহত্তম অংশের মানুষ গ্রামীণ অঞ্চলে বাস করেন এবং কৃষি ক্ষেত্রই তাদের প্রধান জীবিকা। তবে আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির অভাব এবং অপ্রতুল আবহাওয়া অবস্থার কারণে অনেক কৃষক ভালো ফলন পেতে পারেন না। এর ফলে কৃষির প্রতি আগ্রহ কমে গেছে এবং গ্রামীণ যুবকরা কর্মসংস্থানের জন্য শহরের দিকে চলে যাচ্ছে। এছাড়াও, উন্নত কৃষি ও অন্যান্য ব্যবসা খাতে দক্ষতার অভাবও বড় একটি কারণ।

(ii) শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের অভাব

গ্রামীণ অঞ্চলের অনেক যুবকরা এখনও মৌলিক শিক্ষা বা দক্ষতা অর্জন করতে পারছেন না। আধুনিক শিক্ষা ও প্রযুক্তির সাথে সঙ্গতি রেখে তাদের দক্ষতা উন্নয়ন করার সুযোগ খুবই কম। এর ফলে, তারা অনেক সময় শহরের ব্যবসায়িক পরিবেশ বা নতুন শিল্পের সাথে তাল মিলিয়ে কাজ করতে পারে না, যা বেকারত্বের হার বাড়িয়ে দেয়।

(iii) সীমিত উদ্যোক্তা সুযোগ

গ্রামীণ এলাকাগুলোর মধ্যে উদ্যোক্তা বা ছোট ব্যবসা শুরু করার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ কম। ব্যবসার জন্য পর্যাপ্ত বিনিয়োগ, বাজার সম্পর্কিত তথ্য বা উদ্যোক্তা প্রশিক্ষণের অভাব থাকায়, নতুন উদ্যোগ সৃষ্টি কঠিন হয়ে পড়েছে। এর ফলস্বরূপ, গ্রামীণ মানুষ তাদের কর্মসংস্থানের জন্য শহরের দিকে ঝুঁকছে, ফলে শহরের কাজের বাজারে চাপ বাড়ছে এবং গ্রামীণ বেকারত্ব আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে।

৩. শহরের বেকারত্বের পরিস্থিতি

অন্যদিকে, শহরগুলিতেও বেকারত্বের সমস্যা রয়েছে। শহরের শ্রমবাজারে বিভিন্ন ধরনের চাকরি এবং সুযোগ থাকলেও, সেখানে প্রতিযোগিতা অত্যন্ত তীব্র। নতুন প্রজন্মের শিক্ষিত যুবকদের জন্য সঠিক চাকরির সুযোগ পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ছে।

(i) শিক্ষিত বেকার

বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজের ডিগ্রি অর্জন করেও অনেক শিক্ষিত যুবক তাদের পছন্দের চাকরি খুঁজে পাচ্ছেন না। সঠিক দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতা ছাড়া, শুধু শিক্ষাগত যোগ্যতা দিয়ে চাকরি পাওয়া কঠিন। শহরে কর্মসংস্থানের জন্য অতিরিক্ত প্রতিযোগিতার কারণে, অনেক তরুণ-তরুণী বেকার অবস্থায় রয়েছেন, যা বেকারত্বের হার বাড়াচ্ছে।

(ii) প্রযুক্তি এবং অটোমেশন

শহরের শিল্পকারখানায় প্রযুক্তির ব্যবহার এবং অটোমেশনের কারণে অনেক শ্রমিকের কাজ চলে যাচ্ছে। স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রপাতি ও রোবটের কারণে, ম্যানুয়াল শ্রমের চাহিদা কমে গেছে, যা শহরের শ্রমবাজারে বেকারত্বের হার বাড়াচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, যদি আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারের সাথে সঠিকভাবে প্রশিক্ষিত দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি করা না যায়, তবে বেকারত্বের সমস্যা আরও বাড়বে।

৪. গ্রামীণ বেকারত্ব কমানোর জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ

বেকারত্বের সমস্যা শুধুমাত্র শহরের একটি সমস্যা নয়, এটি গ্রামেও একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষজ্ঞরা কিছু পদক্ষেপ সুপারিশ করেছেন যার মাধ্যমে গ্রামীণ বেকারত্ব কমানো সম্ভব:

(i) কৃষি খাতে উন্নয়ন

গ্রামীণ বেকারত্ব কমানোর জন্য কৃষি খাতের উন্নয়ন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি, আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহার এবং কৃষক প্রশিক্ষণ দেয়া যেতে পারে। সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে কৃষি সম্পর্কিত বিভিন্ন প্রকল্প শুরু করা হলে, যুবকদের কৃষি খাতে উৎসাহিত করা সম্ভব।

(ii) ছোট ব্যবসা ও উদ্যোক্তা সৃষ্টি

গ্রামে ছোট ব্যবসা বা মাইক্রো উদ্যোক্তা সৃষ্টির জন্য সরকার ও বেসরকারি খাত থেকে প্রশিক্ষণ এবং ঋণ সহায়তা প্রদান করা যেতে পারে। পাশাপাশি, স্থানীয় বাজারে প্রয়োজনীয় পণ্য উৎপাদন এবং সরবরাহ বাড়ানোর জন্য উদ্যোক্তা সৃষ্টির ওপর গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন।

(iii) শিক্ষা এবং দক্ষতা উন্নয়ন

গ্রামীণ অঞ্চলে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের সুযোগ বাড়ানো এবং দক্ষতা উন্নয়ন প্রোগ্রাম চালু করলে, গ্রামীণ যুবকরা সহজে তাদের কর্মজীবন শুরু করতে পারবেন। বিশেষ করে, প্রযুক্তিগত শিক্ষা এবং কারিগরি প্রশিক্ষণের সুযোগ দিলে, তারা কর্মসংস্থান খুঁজতে সহজ হবে।

বেকারত্ব বাংলাদেশের অন্যতম বড় সামাজিক ও অর্থনৈতিক সমস্যা। বিশেষজ্ঞরা সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে গ্রামীণ বেকারত্ব কমাতে এবং উন্নয়নশীল অর্থনীতির জন্য নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে পরামর্শ দিচ্ছেন। সরকার এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর উচিত এই সমস্যা মোকাবিলায় দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া, যাতে দেশের যুবকরা তাদের কর্মজীবন গঠন করতে পারে এবং দেশের সার্বিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয়।

Pesquisar
Patrocinado
Categorias
Leia mais
Reading List
Unveiling the Enigmatic World of Bookworms: A Deep Dive into the Passion for Reading
In the vast realm of literature enthusiasts, a special breed of individuals stands out –...
Por Razib Paul 2023-12-18 05:13:14 0 6KB
Literature
Mir Mosharraf Hossain: A Literary Luminary of Bengal
Mir Mosharraf Hossain, a prominent figure in Bengali literature, left an indelible mark on the...
Por Bookworm Bangladesh 2024-01-28 05:42:58 0 6KB
Education & Learning
গণিতে অন্তর মানে কি?
গণিতে অন্তর (Difference) মানে হলো দুইটি মানের মধ্যে পার্থক্য বা ব্যবধান। এটি সাধারণত বিয়োগ চিহ্ন...
Por Knowledge Sharing Bangladesh 2024-12-21 12:56:15 0 147
Writing
How to create group on ATReads
ATReads is a popular social networking platform founded by Razib Paul in 2019. It allows users to...
Por AT Reads.com 2023-12-14 07:29:26 0 7KB
Education & Learning
বাংলাদেশের গণিতের জনক কে?
এ জাতীয় উপাধি গণিতবিদদের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ইতিহাসে স্পষ্টভাবে নির্ধারণ করা হয়নি। তবে,...
Por Knowledge Sharing Bangladesh 2024-12-21 13:20:38 0 128