ধর্ম ও সংস্কৃতির দৃষ্টিকোণ থেকে কবরদান পদ্ধতি

0
5KB

মৃত্যু, যা পৃথিবী জীবনের শেষ পরিণতি হিসেবে চিহ্নিত, প্রতিটি সংস্কৃতি ও ধর্মে ভিন্ন ভিন্ন ধারণায় পূর্ণ। মুসলমান, খ্রিস্টান ও ইহুদিরা মৃত ব্যক্তিকে সসম্মানে কবর দেওয়ার পদ্ধতি অনুসরণ করেন, যা তাঁদের ধর্মীয় বিশ্বাস ও মূল্যবোধের প্রতিফলন। এই ধর্মীয় ঐতিহ্যগুলোর মধ্যে একটি সাধারণ সূত্র রয়েছে, তা হলো মর্যাদা, শ্রদ্ধা, এবং পরকালের প্রতি আস্থা। তবে, বিশ্ব ইতিহাসে এক সময় মৃতদেহের সেবা ও কবর দেওয়ার পদ্ধতি ছিল আরও জটিল, যা আজকের সমাজে অনেকাংশে বিলুপ্ত।

প্রাচীন মিসরের কবরদান প্রথা

মৃত্যু পরবর্তী জীবন সম্পর্কে প্রাচীন মিসরীয়দের গভীর বিশ্বাস ছিল। মিসরের শাসক ফেরাউন বা ফারাওরা নিজেদের দেবতা বলে দাবি করতেন, এবং মিসরীয়রা বিশ্বাস করত যে দেবতারা অবিনশ্বর। তাদের ধারণা ছিল, মৃত্যু শুধুমাত্র এই পৃথিবী থেকে পরজগতে যাওয়ার একটি পদ্ধতি, যেখানে ফেরাউন ও রাজ পরিবারের সদস্যদের প্রভাব এবং স্তুতি বজায় রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হতো। এ কারণে ফেরাউন বা রাজ পরিবারের সদস্যদের কবর দেওয়ার পদ্ধতি ছিল ভিন্নতর এবং অত্যন্ত পুণ্যাত্মক।

মমি প্রস্তুতি ও পিরামিড নির্মাণ

মৃত ব্যক্তির দেহকে অমর রাখার জন্য মিসরীয়রা রাসায়নিক পদ্ধতি ব্যবহার করত এবং মমি প্রস্তুত করত। তাদের বিশ্বাস ছিল যে, পরজগতে গিয়ে তাদের দেহের অমরত্ব নিশ্চিত করতে মমি করা জরুরি। পিরামিডের ভিতরে রাখা হতো এসব মমি, যা শুধুমাত্র শাসক কিংবা রাজপরিবারের সদস্যদের জন্যই নির্দিষ্ট ছিল। পিরামিড নির্মাণও ছিল অত্যন্ত বৈজ্ঞানিক ও পরিশ্রমী একটি কাজ, যেখানে প্রাসঙ্গিক ছিল মৃতদেহের সুরক্ষা এবং অমরত্বের ধারণা।

পরজীবনে সেবা ও সম্পদ প্রদান

মিসরীয়রা পরজীবনে ফেরাউনদের সেবার জন্য শত শত দাসদাসীকে হত্যা করে একই সাথে কবর দিত। এমনকি, সুন্দরী নারীদেরও হত্যা করা হতো, যাতে পরজীবনে ফেরাউন বা রাজপরিবারের সদস্যরা তাদের প্রয়োজনীয় জৈবিক চাহিদা মেটাতে সক্ষম হতেন। মৃতদের কবরে খাদ্যদ্রব্য, মণিমুক্তা, কাপড়চোপড়, ধনসম্পদ এবং অস্ত্রশস্ত্র রাখার প্রথাও ছিল। এসব ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে প্রাচীন মিসরীয়রা মৃত্যুর পরবর্তী জীবনের প্রতি তাঁদের দৃঢ় আস্থার প্রতিফলন ঘটাত।

চীনে মৃতের জন্য উপহার: মিসরের সঙ্গে মিল

১৯৯৭ সালে চীনের হুনান প্রদেশে আবিষ্কৃত একটি প্রাচীন কবরস্থান, যা খ্রিস্টপূর্ব ৪০০ বছর পুরানো, প্রাচীন মিসরীয়দের বিশ্বাসের সঙ্গে চীনা মানুষের ধারণার মিলকে উন্মোচন করেছে। এই কবরস্থানে অন্তত ১ হাজার কবর ছিল, যেখানে অস্ত্র, গহনা এবং অন্যান্য মূল্যবান বস্তু পাওয়া গেছে। চীনারাও বিশ্বাস করত, কবর দেওয়ার পর মৃতদেহ ছেড়ে যাওয়া আত্মা যদি ফিরে আসে, তবে জীবিত মানুষের মতো তাদেরও জীবনের চাহিদা থাকবে।

সামগ্রিক দৃষ্টিতে কবর দেওয়ার প্রথা

প্রাচীন মিসর, চীন, এবং বর্তমানে মুসলমান, খ্রিস্টান ও ইহুদিদের কবর দেওয়ার পদ্ধতির মধ্যে একটি সাধারণ ধারণা রয়েছে—মৃত ব্যক্তির প্রতি সম্মান এবং পরকালীন জীবনে আস্থা। প্রতিটি সমাজে, কবর দেওয়ার প্রথা শুধুমাত্র একটি শারীরিক প্রক্রিয়া নয়, বরং এটি একটি আধ্যাত্মিক বিশ্বাসের বাস্তবায়ন। বিভিন্ন সংস্কৃতি এবং ধর্মীয় ঐতিহ্যে মৃতদের প্রতি শ্রদ্ধা ও মর্যাদার প্রতিফলন এই প্রথাগুলির মধ্যে সাদৃশ্য সৃষ্টি করে।

মৃত্যু ও পরজীবন সম্পর্কে মানুষের বিশ্বাস যুগে যুগে পরিবর্তিত হলেও, একথা নিশ্চিত যে, কবর দেওয়ার পদ্ধতি শুধুমাত্র মৃতদেহের সুরক্ষার জন্য নয়, বরং একটি ধর্মীয়, আধ্যাত্মিক এবং সাংস্কৃতিক প্রতীক হিসেবেও বিবেচিত।

Like
Sad
9
Suche
Gesponsert
Kategorien
Mehr lesen
Andere
Liquid Fertilizers Market: A Study of the Industry's Key Players and Their Strategies 2027
In the latest report from Emergen Research, the market research report discusses the...
Von Tani Shah 2023-10-27 11:33:02 0 17KB
Reading List
How many books does a bookworm read a year ?
If you’ve ever wondered how many books a bookworm reads in a year, you're not alone. It's a...
Von Razib Paul 2023-12-18 05:29:26 3 13KB
Book Reviews & Literary Discussions
অপেক্ষা বই রিভিউ
অপেক্ষা: এক নিরেট অপেক্ষার গল্প অপেক্ষা। শব্দটা যতটা সাধারণ, ততটাই গভীর। অপেক্ষার ভেতর লুকিয়ে...
Von Bookworm Bangladesh 2024-12-02 05:18:09 0 4KB
Book Reviews & Literary Discussions
Book Review: মেঠো পথের বাঁকে (হারানো পথ) by মিলটন হোসেন
মিলটন হোসেনের মেঠো পথের বাঁকে (হারানো পথ) একটি অত্যন্ত ব্যতিক্রমী ও মননশীল সাহিত্যকর্ম যা আমাদের...
Von Book Club Bangladesh 2025-02-22 11:51:57 1 8KB
Announcement
আমাদের মিশন – অ্যাটরিডস (ATReads)
অ্যাটরিডসের লক্ষ্য হলো বইপ্রেমীদের জন্য এমন একটি ডিজিটাল পাঠকমঞ্চ তৈরি করা, যেখানে পাঠ, লেখা ও...
Von Razib Paul 2025-05-03 12:59:00 0 7KB
AT Reads https://atreads.com