যিশুখ্রিস্ট: শ্রদ্ধা, ঐতিহাসিক গুরুত্ব ও ক্রিসমাস ডে নিয়ে বিতর্ক
যিশুখ্রিস্ট বা হজরত ঈসা (আ.) দুনিয়ার দুই বৃহত্তম ধর্ম—খ্রিস্টধর্ম এবং ইসলাম—এর অনুসারীদের কাছে এক গভীর শ্রদ্ধাভাজন নাম। ২৫৯ কোটি খ্রিস্টান এবং ২০১ কোটি মুসলমানের ধর্মীয় বিশ্বাসে যিশু এক অমর মহাপুরুষ। খ্রিস্টধর্মের প্রবর্তক হিসেবে যিশু খ্রিস্টানদের কাছে ঈশ্বরপুত্র এবং ত্রাণকর্তা হিসেবে বিবেচিত। অন্যদিকে, মুসলমানরা তাঁকে আল্লাহর প্রেরিত একজন মহান নবী হিসেবে মান্য করেন।
খ্রিস্টান ও মুসলমানদের সম্পর্ক
যদিও খ্রিস্টান ও মুসলমানদের মধ্যে বহু ক্ষেত্রে দ্বন্দ্ব এবং সংঘাতের ইতিহাস রয়েছে, তবু যিশু বা ঈসা (আ.)-কে মুসলমানদের মধ্যে বিরূপ দৃষ্টিতে দেখার কোনো উদাহরণ নেই। ইসলামে হজরত ঈসা (আ.)-এর প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন ধর্মীয়ভাবে বাধ্যতামূলক। তিনি মুসলমানদের পবিত্র কোরআনে উল্লেখিত একজন সম্মানিত নবী। অথচ খ্রিস্টানদের মধ্যেই কিছু ব্যক্তি যিশুখ্রিস্টের প্রতি বিদ্রূপমূলক মনোভাব প্রদর্শন করে থাকেন, যা মুসলমানদের ধর্মীয় সংস্কৃতির সঙ্গে সম্পূর্ণ বিপরীত।
জেরুজালেম ও কনস্টান্টিনোপলের গুরুত্ব
খ্রিস্টান ও মুসলমানদের কাছে জেরুজালেম একটি পবিত্র নগরী। এখানেই রয়েছে যিশুখ্রিস্টের জীবনের বহু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। তুরস্কের প্রধান নগরী কনস্টান্টিনোপলও (বর্তমান ইস্তাম্বুল) খ্রিস্টান ও মুসলমানদের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ। এই দুই নগরী দখল নিয়ে দুই ধর্মের অনুসারীদের মধ্যে ১০৯৫ থেকে ১২৯১ সাল পর্যন্ত একাধিক ক্রুসেড সংঘটিত হয়। ইউরোপের খ্রিস্টানরা একজোট হয়ে তুরস্কের উসমানিয়া সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে লড়াই করে। এসব যুদ্ধে কখনো খ্রিস্টানরা জয়লাভ করেছে, আবার কখনো মুসলমানরা।
ক্রিসমাস ডে: ইতিহাস ও বিতর্ক
যিশুখ্রিস্টের জন্মদিন হিসেবে ২৫ ডিসেম্বর দিনটি সারা বিশ্বে ক্রিসমাস ডে বা বড়দিন হিসেবে পালিত হয়। কিন্তু এ তারিখটি নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। ঐতিহাসিক তথ্য মতে, ২৫ ডিসেম্বর দিনটি প্রথমে রোমান দেবতা মিথরাসের জন্মদিন হিসেবে পালন করা হতো। খ্রিস্টানদের মধ্যে খ্রিস্টধর্ম প্রচার সহজ করার জন্য রোমান সম্রাট কনস্টান্টিন ২৫ ডিসেম্বরকে যিশুর জন্মদিন হিসেবে প্রচলিত করেন। সম্রাট কনস্টান্টিন, যিনি মিথরাস ধর্মের অনুসারী ছিলেন, কৌশলে মিথরাস ধর্মের অনেক বিধানকে খ্রিস্টধর্মের সঙ্গে মিশিয়ে দেন।
যিশুর প্রতি মুসলমানদের দৃষ্টিভঙ্গি
যিশুখ্রিস্ট, যাঁকে মুসলমানরা হজরত ঈসা (আ.) নামে জানেন, ইসলামে অত্যন্ত সম্মানিত এবং গুরুত্বপূর্ণ একটি ব্যক্তিত্ব। তিনি আল্লাহর প্রেরিত একজন মহান নবী হিসেবে স্বীকৃত। মুসলমানরা বিশ্বাস করেন, ঈসা (আ.) ছিলেন আল্লাহর পাঠানো নবীদের মধ্যে অন্যতম, যাঁর মাধ্যমে মানবজাতির কাছে সৎপথের বার্তা পৌঁছানো হয়েছে।
ঈসা (আ.)-এর পরিচিতি ইসলাম ধর্মে
ইসলামের পবিত্র গ্রন্থ কোরআনে ঈসা (আ.)-এর নাম বহুবার উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি ছিলেন মারিয়ামের (মেরি) পুত্র এবং অলৌকিকভাবে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। ইসলামে এই অলৌকিক জন্ম একটি মহৎ নিদর্শন হিসেবে গণ্য। ঈসা (আ.)-এর জীবনের ঘটনাবলি, যেমন তাঁর নবুয়ত, অলৌকিক ক্ষমতা এবং মানুষের সেবায় নিবেদিত কর্ম, কোরআনে বর্ণিত হয়েছে।
ঈসা (আ.)-এর অলৌকিক ক্ষমতা
মুসলমানদের বিশ্বাস অনুযায়ী, ঈসা (আ.)-কে আল্লাহ বিশেষ অলৌকিক ক্ষমতা প্রদান করেছিলেন। তিনি মৃতকে জীবিত করা, অন্ধকে দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দেওয়া এবং কুষ্ঠ রোগীদের সুস্থ করে তোলার মতো কাজ করেছিলেন। তবে মুসলমানরা মনে করেন, এই ক্ষমতাগুলো সরাসরি ঈসা (আ.)-এর নিজের নয়; এগুলো ছিল আল্লাহর পক্ষ থেকে দান।
উপসংহার
যিশুখ্রিস্ট বা হজরত ঈসা (আ.) মানবতার প্রতি তাঁর মহান বার্তা এবং শিক্ষার জন্য যুগ যুগ ধরে শ্রদ্ধেয় হয়ে আছেন। ধর্মীয় ও ঐতিহাসিক বিভেদের মধ্যেও তাঁর প্রতি সম্মানের এই অবস্থান প্রমাণ করে, সত্যিকারের মহাপুরুষরা মানুষের হৃদয়ে চিরকাল বেঁচে থাকেন।
- Book Reviews & Literary Discussions
- Writing
- Reading List
- Arts and Entertainment
- Personal Development
- Storytelling
- Startup
- Books
- Arts & Crafts
- Dance
- Drinks
- Entertainment & Pop Culture
- Health & Fitness
- Education & Learning
- Food & Cooking
- Παιχνίδια
- Gardening
- Self-Care & Mental Health
- Home Decor & DIY
- Literature
- Music
- Networking
- άλλο
- Party
- Philosophy and Religion
- Τόπος
- Shopping
- Relationships & Dating
- Sports
- Theater
- lifestyles & hobbies/shutterbugs
- Lifelong Learning
- Tutorial
- Announcement
- Inspirational Stories & Motivation