মানুষ জন্মগতভাবে অপরাধী নয়, তাকে মানুষের মতো দেখতে হবে

2
3KB

সামাজিক যে কোনো সমস্যা মোকাবিলায় আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একদিকে যেমন অপরাধ আমাদের সমাজের জন্য একটি বড় সমস্যা, তেমনি অপরাধী ব্যক্তি যেহেতু মানুষেরই অংশ, তাই তাকে ঘৃণার চোখে দেখা উচিত নয়। আমাদের সমাজে বেশ কিছু লোক আছেন যারা দুর্দশা বা নানা সমস্যার মধ্যে দিয়ে অপরাধের পথে চলে যান। কিন্তু তাদের প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি কখনোই শত্রু বা আসামি হওয়ার উচিত নয়। বরং, তাদেরকে একে অপরের মতো একজন মানুষ হিসেবেই দেখা উচিত, যাতে তারা নতুন করে জীবনের সুযোগ পায়।

মানুষ জন্মগতভাবে অপরাধী নয়

এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে আমরা বুঝতে পারি, অপরাধী হওয়া কোনো ব্যক্তির জন্মগত বৈশিষ্ট্য নয়। এটি মূলত পরিবেশ, পরিস্থিতি, শৈশবকালীন অভিজ্ঞতা এবং সামাজিক প্রভাবের ফলস্বরূপ হতে পারে। একটি সঠিক পরিবার, ভালো শিক্ষা, উপযুক্ত সামাজিক পরিবেশ—এইসব কিছুই একজন ব্যক্তির জীবনকে সুস্থ এবং সৎ পথের দিকে পরিচালিত করতে পারে। যখন মানুষ দরিদ্রতা, অপর্যাপ্ত শিক্ষা, পারিবারিক অশান্তি কিংবা অপরাধমুলক কর্মকাণ্ডের আশেপাশে থাকে, তখন অপরাধে জড়ানোর সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

অপরাধের কারণ

অপরাধে জড়িয়ে যাওয়ার পেছনে অনেক কারণ রয়েছে। যেসব মানুষ চরম আর্থিক কষ্টে থাকে, সমাজের নীচু স্তরে অবস্থান করে, তারা একসময় অপরাধী হয়ে ওঠেন—এটি প্রায়ই দেখা যায়। আবার অনেক ক্ষেত্রে, পারিবারিক সহিংসতা, সামাজিক বৈষম্য কিংবা মানসিক অসুস্থতা অপরাধের কারণ হতে পারে। যখন ব্যক্তির কাছে সুদৃঢ় জীবনযাপনের জন্য উপযুক্ত সুযোগ থাকে না, তখন সে নিজেকে অপরাধের পথে টেনে আনে। এটি সমাজের একটি বড় ব্যর্থতা হিসেবে দেখা উচিত।

অপরাধীর প্রতি ঘৃণার পরিবর্তে সহানুভূতি

অপরাধীকে ঘৃণার চোখে দেখা কখনোই সঠিক নয়। অপরাধী কেবল অপরাধী নয়, তারা মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং সহানুভূতিরও যোগ্য। তাদের জীবনেও বহু চড়াই-উতরাই, অবহেলা এবং বঞ্চনা থাকতে পারে, যা তাদের অপরাধের পথে ঠেলে দিয়েছে। একে অপরকে সহানুভূতি এবং সমবেদনা দিয়ে দেখলে, আমরা সমাজকে আরও সুন্দর এবং মানবিকভাবে গড়ে তুলতে পারব। অপরাধী হওয়ার পর মানুষকে শুধুমাত্র “আসামি” হিসেবে চিহ্নিত করার পরিবর্তে, তাকে একজন মানুষ হিসেবে দেখে তার পরবর্তী জীবন গঠনে সহায়তা করা উচিত।

বন্দির প্রতি মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি

বন্দিরাও কোনো সাধারণ মানুষ, যারা একটি ভুল করেছে এবং তাদের সেই ভুলের জন্য শাস্তি ভোগ করছে। তাদের প্রতি মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করা উচিত। তাদের শাস্তি শেষ হওয়ার পর যদি আমরা তাদের নতুন জীবনের সুযোগ দিই, তাদের প্রতি সহানুভূতি দেখাই, তবে তারা সমাজে সৎভাবে ফিরে আসতে পারবে। এক্ষেত্রে, আমরা যদি বন্দিদেরকে শুধুমাত্র আসামি হিসেবে দেখি, তবে তাদের জীবনে পুনর্বাসনের সুযোগ পাওয়া কঠিন হয়ে পড়বে। মানবাধিকার রক্ষা করা, তাদের মানসিক শান্তি বজায় রাখা এবং ভবিষ্যতে তাদের সঠিক পথ দেখানো আমাদের দায়িত্ব।

পুনর্বাসন ও সমাজে ফিরিয়ে আনা

অপরাধী ব্যক্তিকে শুধু শাস্তি দেওয়া যথেষ্ট নয়; তাদের পুনর্বাসনও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যখন একজন বন্দি শাস্তি কাটিয়ে বেরিয়ে আসে, তখন তার সমাজে এক নতুন জীবন শুরু করার প্রয়োজন। সমাজের বিভিন্ন অংশের দ্বারা তাকে সাহায্য এবং সহায়তা দেওয়া উচিত, যাতে সে আবার তার জীবন নতুনভাবে গড়তে পারে। এখানে সমাজের দায়িত্ব হলো বন্দির সঠিক পুনর্বাসন ব্যবস্থা তৈরি করা, তাদের কর্মসংস্থান এবং সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা তৈরি করা, যাতে তারা আবার সমাজে সঠিকভাবে মিশে যেতে পারে।

মানবাধিকার এবং সমবেদনা

প্রতিটি ব্যক্তির মানবাধিকার রয়েছে, তা সে অপরাধী হোক কিংবা সৎ। অপরাধী ব্যক্তির অধিকার এবং সম্মান রক্ষার জন্য আমাদের সম্মানজনক আচরণ করা উচিত। তাদের ক্ষেত্রে শাস্তি একটি বিষয়, কিন্তু সম্মান এবং মানবিক অধিকার রক্ষা করা অপরিহার্য। শুধুমাত্র শাস্তির মাধ্যমে কোনো সমস্যা সমাধান হবে না। বরং, অপরাধীকে সম্মান ও সমবেদনা দিয়ে, তাকে মানবিক মর্যাদা প্রদান করে আমরা সামাজিকভাবে আরও শক্তিশালী হতে পারি।

সামাজিক দায়িত্ব

আমাদের, সমাজের প্রতিটি সদস্যের দায়িত্ব রয়েছে অপরাধী ব্যক্তির পুনর্বাসনে সহায়তা করা। এটা শুধুমাত্র সরকারের বা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাজ নয়, বরং আমাদেরও কর্তব্য, যাতে অপরাধীরা তাদের অপরাধের পর একটি নতুন সুযোগ পায়। সামাজিকভাবে অপরাধী ব্যক্তিকে পুনর্বাসন এবং নতুন জীবন শুরুর সুযোগ দিয়ে, আমরা তাদের সমাজের কাছে ফিরে আসার পথ তৈরি করতে পারি। এভাবে, একটি সহানুভূতিশীল সমাজ গড়ে তোলা সম্ভব হবে।

যত্ন এবং সুযোগের অভাব

অনেক সময় অপরাধী হওয়া মানুষ কোনো কারণে প্রয়োজনীয় যত্ন এবং সুযোগ পায়নি। তারা যদি ছোটবেলায় যথাযথ শিক্ষা, পরিবারিক সহায়তা বা সামাজিক পরিবেশ না পায়, তাহলে অপরাধের দিকে প্রবৃদ্ধি অবধি তাদের পৌঁছে যেতে পারে। সুতরাং, অপরাধের কারণগুলো বিশ্লেষণ করা এবং প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ নেওয়া আমাদের সামাজিক দায়িত্ব।

পুনর্বাসন ও সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্যতা

অপরাধীকে শুধু সঠিক শাস্তি দেওয়া যথেষ্ট নয়। তাকে পুনর্বাসন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সমাজে গ্রহণযোগ্য করার কাজটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। পুনর্বাসনের মাধ্যমে, অপরাধী নতুনভাবে তাদের জীবন শুরু করতে পারে এবং সমাজের জন্য উপকারী সদস্য হয়ে উঠতে পারে। সমাজকে এই গ্রহণযোগ্যতা প্রদানে সদর্থক মনোভাব থাকতে হবে, যাতে পুনর্বাসনের পর অপরাধী ব্যক্তিরা সমাজে পুনরায় সুস্থভাবে ফিরতে পারে।


সবশেষে, অপরাধীকে ঘৃণার চোখে দেখার পরিবর্তে, তাকে একটি নতুন জীবন শুরুর সুযোগ দেওয়ার মাধ্যমে আমরা একটি সহানুভূতিশীল এবং সুন্দর সমাজ গড়তে পারব।

Like
Love
8
Suche
Gesponsert
Kategorien
Mehr lesen
Ort
খলিষখালী ইউনিয়নের দুইটি কলেজ: শিক্ষার আলো ছড়ানোর উজ্জ্বল প্রতিষ্ঠান
খলিষখালী ইউনিয়ন, সাতক্ষীরার তালা উপজেলার অন্তর্ভুক্ত একটি ঐতিহ্যবাহী এলাকা, যা শিক্ষা, সংস্কৃতি...
Von Khalishkhali 2024-12-22 12:29:43 0 2KB
Literature
Exploring the Evolution and Essence of Modern Literature
The Impact of Artificial Intelligence on the Future of Healthcare In recent years, artificial...
Von Adila Mim 2023-09-08 12:57:52 1 11KB
Theater
What is reading habit?
A reading habit refers to a regular and consistent practice of reading. It is the act of engaging...
Von Kajol Sharma 2023-07-06 06:26:32 0 13KB
Book Reviews & Literary Discussions
The Pregnant Body Book
Pregnancy is one of the most profound and transformative experiences in the human lifecycle. DK...
Von Books of the Month 2024-12-31 12:31:38 1 2KB
Books
দ্রুত বই পড়ার কৌশল
 জ্ঞান অর্জনে দক্ষতার নতুন পথ বই পড়া একটি গুরুত্বপূর্ণ দক্ষতা, যা আমাদের জ্ঞান বাড়াতে,...
Von Razib Paul 2024-11-29 13:44:17 0 2KB
AT Reads https://atreads.com