বাংলাদেশের নামকরণ করেন কে?

0
6K

বাংলাদেশের ইতিহাস অত্যন্ত গৌরবময় ও সংগ্রামী। এই দেশের প্রতিটি অধ্যায়ে রয়েছে সংগ্রাম, ত্যাগ, এবং বীরত্বের প্রতিচ্ছবি। তবে বাংলাদেশের নামকরণ একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়, যা আমাদের স্বাধীনতার ইতিহাসে অনন্য ভূমিকা পালন করে। “বাংলাদেশ” নামটি শুধু একটি ভূখণ্ডের পরিচয় নয়; এটি একটি জাতির স্বাধিকার এবং অস্তিত্বের প্রতীক। বাংলাদেশের নামকরণ করেন বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

নামকরণের পটভূমি

১৯৪৭ সালে ভারত-পাকিস্তান বিভাজনের পর বর্তমান বাংলাদেশের ভূখণ্ড পূর্ব পাকিস্তান নামে পরিচিত হয়। কিন্তু পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর শোষণ, বঞ্চনা, এবং বৈষম্যের শিকার হতে হতে বাঙালি জাতি তাদের স্বতন্ত্র পরিচয়ের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে। ১৯৬০-এর দশকে, পূর্ব পাকিস্তানে বাঙালিদের মাঝে জাতীয়তাবাদী চেতনা জাগ্রত হয়।

১৯৬৬ সালে ছয় দফা কর্মসূচি ঘোষণা করে শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালির রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মুক্তির পথনির্দেশনা দেন। কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তান সরকার তা দমন করার চেষ্টা করে। এ সময় বাংলার জনগণের মধ্যে স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা আরো প্রবল হয়।

“বাংলাদেশ” নামকরণের ঘোষণা

১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের সময় বাঙালির সংগ্রাম নতুন মাত্রা পায়। একই বছর ৫ই ডিসেম্বর ঢাকায় শহীদ সোহ্‌রাওয়ার্দীর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক জনসভায় শেখ মুজিবুর রহমান পূর্ব পাকিস্তানের নাম পরিবর্তন করে “বাংলাদেশ” রাখার ঘোষণা দেন। তিনি বলেন,
“আজ থেকে পূর্ব পাকিস্তানের নাম হবে বাংলাদেশ। কারণ, আমাদের সংস্কৃতি, ইতিহাস এবং পরিচয় পশ্চিম পাকিস্তান থেকে আলাদা। আমরা আমাদের স্বতন্ত্র পরিচয় চাই।”

নামকরণের তাৎপর্য

“বাংলাদেশ” নামটি শুধু একটি ভূগোলের পরিচায়ক নয়; এটি একটি জাতির ভাষা, সংস্কৃতি এবং অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রতীক। বঙ্গবন্ধুর নামকরণের মাধ্যমে বাঙালির স্বতন্ত্রতা ও জাতীয় পরিচয় নতুন করে সবার সামনে তুলে ধরা হয়। এই নামটি বাঙালিদের হৃদয়ে গভীর প্রভাব ফেলে এবং স্বাধীনতার আন্দোলনে প্রেরণা জোগায়।

নামকরণের পরবর্তী প্রতিক্রিয়া

“বাংলাদেশ” নামকরণের ঘোষণার পর বাঙালি জনগণের মধ্যে স্বাধীনতার চেতনা আরও জোরালো হয়ে ওঠে। পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী এই নামকরণকে ভালোভাবে গ্রহণ করেনি এবং এটি দমন করার জন্য কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করে। কিন্তু শেখ মুজিব এবং বাঙালি জাতি তাদের অবস্থানে অটল থাকে।

১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে “বাংলাদেশ” নামটি সারা বিশ্বে স্বীকৃতি পায়। ১৬ই ডিসেম্বর স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম হয় এবং “বাংলাদেশ” নামটি বিশ্বের মানচিত্রে স্থান করে নেয়।

বাংলাদেশ নামের প্রাসঙ্গিকতা

“বাংলাদেশ” শব্দটি বাংলা ভাষা, সংস্কৃতি, এবং ঐতিহ্যের মূর্ত প্রতীক। এর মানে হলো “বাংলার দেশ,” যা বাঙালি জাতির ইতিহাস এবং সংগ্রামের চিরন্তন স্মারক। এটি শুধু একটি নাম নয়; এটি বাঙালির গৌরবময় অতীত এবং উজ্জ্বল ভবিষ্যতের প্রতীক।

উপসংহার

বাংলাদেশের নামকরণ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একটি দূরদর্শী এবং সাহসী সিদ্ধান্ত। এটি বাঙালি জাতিকে তাদের স্বতন্ত্র পরিচয় এবং আত্মমর্যাদার পথে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা দিয়েছে। এই নামটি জাতীয়তাবাদ, ঐক্য এবং স্বাধীনতার মূল চেতনার প্রতিফলন। আজ আমরা “বাংলাদেশ” নামে একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের গর্বিত নাগরিক। এই নামটি আমাদের জাতীয় অস্তিত্বের মূলে গভীরভাবে প্রোথিত।

Like
1
Site içinde arama yapın
Sponsorluk
Kategoriler
Read More
Books
চার্লস ডিকেন্স এর বাংলা অনুবাদ বই
চার্লস ডিকেন্সের বাংলা অনুবাদ বই: সাহিত্যের ধ্রুপদী রূপ চার্লস ডিকেন্স (Charles Dickens) ইংরেজি...
By Shopna Maya 2024-11-28 13:18:15 2 7K
Reading List
Strategies to Build Good Reading Habits
Building good reading habits is essential for personal growth and lifelong learning. Here are...
By Piya Goshal 2023-07-06 06:44:38 0 16K
Other
সাতক্ষীরার বিখ্যাত মিষ্টি
বাংলাদেশের মিষ্টির জগতে সাতক্ষীরার মিষ্টি একটি গর্বের নাম। সাতক্ষীরার খাঁটি দুধের ছানা দিয়ে তৈরি...
By Khalishkhali 2024-12-05 05:15:23 0 7K
Storytelling
গল্প লেখার নিয়ম
গল্প বলা বা লেখা মানব সভ্যতার এক অনন্য শিল্প। এটি কেবল বিনোদনের মাধ্যম নয়, বরং মানুষের অভিজ্ঞতা,...
By WriteAhead Bangladesh 2024-12-02 13:54:01 0 7K
Literature
বিদ্যাসাগর তার বই বিক্রি করে উপার্জন করেন কোন বয়সে?
বিদ্যাসাগরের বই বিক্রি ও পৌঢ় বয়সে অর্থ উপার্জন: একটি গভীর আলোচনা ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, যিনি...
By Pakhi Sarkar 2024-12-18 07:41:46 5 7K
AT Reads https://atreads.com