ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কত সালে প্রতিষ্ঠিত হয়?

0
4K

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, যা বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষার প্রাচীনতম এবং অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান, ইতিহাস, শিক্ষা, এবং জাতীয় আন্দোলনের সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িত।

এটি শুধু একটি বিশ্ববিদ্যালয় নয়; বরং একটি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র এবং মুক্তচিন্তার প্রতীক। তবে অনেকের মনে প্রশ্ন থাকে, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কত সালে প্রতিষ্ঠিত হয়?” সংক্ষেপে বলা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯২১ সালের ১ জুলাই।  

এই প্রবন্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠার পটভূমি, ইতিহাস, অবদান, এবং আধুনিক যুগে শিক্ষার্থীদের জন্য এর গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করা হবে। এছাড়াও, ATReads নামে শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকদের জন্য বিশেষভাবে তৈরি একটি সামাজিক মাধ্যমের কথা তুলে ধরা হবে, যা তাদের শিক্ষাজীবন আরও সমৃদ্ধ করে তুলতে পারে।  

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পটভূমি  

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপট জড়িয়ে আছে ভারতীয় উপমহাদেশের শিক্ষা, সামাজিক উন্নয়ন, এবং রাজনৈতিক আন্দোলনের সঙ্গে। ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গ এবং ১৯১১ সালে তা প্রত্যাহারের পর পূর্ববঙ্গের মানুষের মধ্যে শিক্ষা বিস্তারের প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হয়।  

 ১. বঙ্গভঙ্গ ও শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা  
বঙ্গভঙ্গের সময়ে পূর্ববঙ্গের মানুষ শিক্ষা এবং প্রশাসনিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত ছিলেন। ঢাকায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের দাবি উঠে, যাতে পূর্ববঙ্গের শিক্ষার্থীরা উচ্চশিক্ষার সুযোগ পান।  

 ২. নাথান কমিশনের সুপারিশ  
১৯১২ সালে লর্ড হার্ডিঞ্জ ঢাকা সফরকালে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কথা বলেন। এরপর **সাদার্ন এশিয়া অ্যাডভাইসরি কমিটি** এবং **মাইকেল নাথান কমিশন** ঢাকায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের সুপারিশ করে।  

৩. আইন পাস এবং বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনা  
১৯২০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আইন গৃহীত হয় এবং ১৯২১ সালের ১ জুলাই থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়।  

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম দিন  

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম দিনে তিনটি অনুষদ, ১২টি বিভাগ, এবং ৬০৫ জন শিক্ষার্থী ছিল। প্রথম উপাচার্য ছিলেন স্যার ফিলিপ জোসেফ হার্টগ। প্রতিষ্ঠাকালে বিশ্ববিদ্যালয়টি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের মডেল অনুসরণ করেছিল।  

প্রথম তিনটি অনুষদ:  
1. কলা অনুষদ  
2. বিজ্ঞান অনুষদ  
3. আইন অনুষদ  

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহাসিক অবদান  

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেবল একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নয়; এটি বাংলাদেশের সামাজিক, সাংস্কৃতিক, এবং রাজনৈতিক পরিবর্তনের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র।  

 ১. ভাষা আন্দোলন  
১৯৪৮ থেকে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ভূমিকা ছিল অনস্বীকার্য। এখানে থেকেই মাতৃভাষার জন্য প্রথম প্রতিবাদের সূচনা হয়েছিল।  

 ২. মুক্তিযুদ্ধ  
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীরা বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর প্রথম হামলা হয়েছিল এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবাসে।  

৩. গণতান্ত্রিক আন্দোলন  
স্বাধীনতা পরবর্তী সময়েও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশে গণতন্ত্র এবং মানবাধিকার আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দু ছিল।  

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: শিক্ষার আধুনিক দিক  

আজকের দিনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ১৩টি অনুষদ, ৮৩টি বিভাগ, এবং প্রায় ৪০,০০০ শিক্ষার্থী নিয়ে কাজ করছে। এটি গবেষণা এবং শিক্ষার ক্ষেত্রে দেশের শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান।  

 আধুনিক সুযোগ-সুবিধা  
- উন্নত গবেষণা কেন্দ্র  
- ডিজিটাল লাইব্রেরি  
- আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী বিনিময় কার্যক্রম  
- বিভিন্ন প্রফেশনাল কোর্স  

 শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ কর্মসূচি  
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন প্রশিক্ষণ এবং কর্মশালা আয়োজন করে।  

ATReads: শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের সামাজিক মাধ্যম  

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের মাঝে জ্ঞান বিনিময়ের জন্য একটি দক্ষ মাধ্যম প্রয়োজন। ATReads হলো সেই মাধ্যম, যা শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকদের জন্য একটি বিশেষ সামাজিক মাধ্যম হিসেবে কাজ করে।  

 ATReads-এর বৈশিষ্ট্য:  
1. শিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধি:
ATReads শিক্ষার্থীদের জন্য রেফারেন্স বই, গবেষণাপত্র, এবং প্রবন্ধ সহজলভ্য করে।  

2. গবেষকদের জন্য প্ল্যাটফর্ম:  
শিক্ষক এবং গবেষকরা এখানে তাদের কাজ শেয়ার করতে পারেন এবং একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারেন।  

3. শিক্ষার্থীদের জন্য গাইডলাইন:  
পড়াশোনা, ক্যারিয়ার গাইডেন্স, এবং বিভিন্ন স্কলারশিপের তথ্য ATReads-এ পাওয়া যায়।  

4. আন্তর্জাতিক যোগাযোগ:  
ATReads শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকদের জন্য আন্তর্জাতিক গবেষকদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের সুযোগ করে দেয়।  

5. সৃজনশীল চর্চা:  
শিক্ষার্থীরা তাদের প্রবন্ধ, গল্প, এবং কবিতা এখানে শেয়ার করতে পারেন।  

কেন ATReads ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ?  
- তথ্যের সহজলভ্যতা  
- একাডেমিক সহায়তা  
- গবেষণায় সহায়তা  
- আন্তর্জাতিক মানের যোগাযোগ  

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবিষ্যৎ  

বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার মেরুদণ্ড হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে আরও আধুনিক এবং আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন করার প্রয়োজন।  

 উন্নতির সম্ভাবনা:  
1. গবেষণার প্রসার:  
বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণার মান উন্নত করতে আরও বিনিয়োগ প্রয়োজন।  
2. প্রযুক্তি সংযোজন:  
ডিজিটাল শিক্ষা ব্যবস্থা এবং অনলাইন কোর্স চালু করা উচিত।  
3. আন্তর্জাতিক সহযোগিতা:  
বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে আরও বেশি সহযোগিতা প্রয়োজন।  

উপসংহার  

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, যা ১৯২১ সালের ১ জুলাই প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, কেবল একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নয়, বরং এটি বাংলাদেশের সামাজিক এবং রাজনৈতিক ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ। এর অবদান শুধুমাত্র উচ্চশিক্ষায় সীমাবদ্ধ নয়; এটি জাতির মননশীলতা, চিন্তা, এবং সংস্কৃতিকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছে।  

আজকের দিনে ATReads-এর মতো প্ল্যাটফর্ম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন সুযোগ তৈরি করেছে। এটি শিক্ষার্থীদের জন্য একটি ডিজিটাল মঞ্চ, যেখানে তারা জ্ঞান, অভিজ্ঞতা, এবং সৃজনশীলতাকে আরও বিকশিত করতে পারে।  

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠার শতবর্ষ পেরিয়ে, এটি এখনো বাংলাদেশের শিক্ষা এবং সংস্কৃতির আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। এটি শুধু অতীতের গৌরব নয়, বরং ভবিষ্যতের পথপ্রদর্শক। ATReads-এর মতো উদ্যোগ এর সাফল্যকে আরও প্রসারিত করবে।  

Yay
1
Search
Sponsored
Categories
Read More
Book Reviews & Literary Discussions
শফীউদ্দীন সরদার এর উপন্যাস
কেন পড়বেন "আওয়ারা"? আপনি কি ইসলামের গৌরবময় ইতিহাস জানতে চান? সত্যিকারের বীরদের গল্প শুনতে চান,...
By Book Club Bangladesh 2025-02-22 10:17:45 0 6K
Writing
Importance of 10 minute reading
Engaging in 10-minute reading sessions holds several important benefits:...
By Razib Paul 2023-07-03 06:00:22 6 15K
Books
What to Gift a Bookworm?
Choosing the perfect gift for a bookworm can be a delightful experience, as there are so many...
By Books of the Month 2025-02-11 08:27:15 2 3K
Announcement
ATReads: The Ultimate Readers’ Social Media Platform
However, amid this digital noise, a refreshing space exists for book lovers who seek a community...
By AT Reads.com 2024-09-30 07:15:49 1 10K
Book Reviews & Literary Discussions
Book Review: মেঠো পথের বাঁকে (হারানো পথ) by মিলটন হোসেন
মিলটন হোসেনের মেঠো পথের বাঁকে (হারানো পথ) একটি অত্যন্ত ব্যতিক্রমী ও মননশীল সাহিত্যকর্ম যা আমাদের...
By Book Club Bangladesh 2025-02-22 11:51:57 1 7K
AT Reads https://atreads.com