টিভি চ্যানেল ও বাংলা সিনেমা: টিভি সিনেমার ব্যবসার উত্থান-পতন
ষাট থেকে আশির দশকের প্রথম পর্যন্ত টেলিভিশনে বাংলা সিনেমা দেখার জন্য দর্শকদের মধ্যে যে উন্মাদনা দেখা যেত, তা আজও স্মৃতিতে অম্লান। বিশেষত ১৯৬৪ সালের ২৫ ডিসেম্বর যখন বর্তমানের বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) যাত্রা শুরু করে, তখন থেকেই এদেশের সংস্কৃতিতে টেলিভিশন একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান করে নেয়। ষাট দশকের শেষ ভাগ থেকে মাসে একবার বিটিভিতে সিনেমা প্রদর্শন শুরু হয়। এই একটি দিনের জন্য ঘরে ঘরে সপরিবারে টেলিভিশনের সামনে বসে সিনেমা দেখার এক অসাধারণ সংস্কৃতি গড়ে ওঠে।
বাংলাদেশের টেলিভিশন সংস্কৃতির ইতিহাসে সিনেমা প্রদর্শন এক সময় ছিল বিনোদনের অন্যতম বড় উৎস। বিশেষত ষাট থেকে আশির দশকের প্রথম পর্যন্ত সময়টিতে, টেলিভিশনে মাসে একবার বাংলা সিনেমা প্রদর্শনকে ঘিরে পুরো পরিবারজুড়ে উৎসবের আমেজ বিরাজ করত। ১৯৬৪ সালের ২৫ ডিসেম্বর দেশের প্রথম টেলিভিশন চ্যানেল, বর্তমানে বিটিভি নামে পরিচিত, প্রতিষ্ঠিত হয়। সেই সময় থেকেই টিভিতে সিনেমা প্রদর্শন একটি বিশেষ ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হতে থাকে।
বর্তমানে টিভি চ্যানেলে সিনেমা প্রচার একটি প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবসার রূপ নিয়েছে। এই নিবন্ধে আমরা টিভি চ্যানেলের সিনেমা ব্যবসার ইতিহাস, বর্তমান চিত্র এবং এর আর্থিক দিকগুলো বিশদে আলোচনা করব।
টেলিভিশনে সিনেমা প্রচারের ইতিহাস
১৯৬০-এর দশকের শেষের দিকে বিটিভিতে মাসে একবার সিনেমা প্রদর্শন শুরু হয়। এটি দর্শকদের জন্য ছিল বিশেষ এক দিনের অপেক্ষা। টিভি চ্যানেলের সিনেমা প্রদর্শনের অর্থনৈতিক দিক তখন সেভাবে আলোচিত না হলেও এটি পরিবারের জন্য একটি সামাজিক উৎসব হয়ে দাঁড়াত।
১৯৯৭ সালে বেসরকারি চ্যানেল এটিএন বাংলা চালু হওয়ার পর থেকে টিভিতে সিনেমা প্রদর্শনের ব্যবসায়িক রূপ পরিস্কার হতে থাকে। বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ৪০টি বেসরকারি টিভি চ্যানেল রয়েছে, যেগুলো বিভিন্ন সময়ে সিনেমা প্রদর্শন করে থাকে।
বর্তমান টিভি সিনেমার বাজার
বর্তমানে টিভি চ্যানেলে সিনেমা প্রদর্শন একটি প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। এখানে প্রযোজক, সাপ্লাইয়ার, এবং টিভি চ্যানেলগুলোর মধ্যে একটি সুপরিকল্পিত চুক্তি হয়ে থাকে।
সিনেমার মূল্য নির্ধারণ
- **নায়ক ও নায়িকার উপর ভিত্তি করে মূল্য:**
টিভি চ্যানেলে সিনেমার মূল্য নির্ধারণ অনেকটাই নির্ভর করে নায়ক-নায়িকার জনপ্রিয়তা এবং সিনেমার নতুন বা পুরনো হওয়ার ওপর।
- শাকিব খানের সিনেমা বর্তমানে সবচেয়ে বেশি মূল্যে বিক্রি হয়।
- প্রয়াত সালমান শাহের সিনেমার চাহিদাও এখনো উঁচুতে।
- **সিনেমা প্রদর্শনের চুক্তি:**
একটি সিনেমা টিভিতে বছরে তিনবার প্রদর্শিত হতে পারে। এর জন্য গড়ে ১০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকার মধ্যে চুক্তি হয়। তবে বিটিভির ক্ষেত্রে এই দরদাম তুলনামূলক বেশি, ১.৭৫ লাখ থেকে আড়াই লাখ টাকা পর্যন্ত।
টিভি চ্যানেলের লাভ-ক্ষতির হিসাব
লাভের উৎস
১. **বিজ্ঞাপন আয়:**
টিভি চ্যানেলগুলো সিনেমা প্রচারের সময় বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে আয় করে। তবে মিক্সড চ্যানেলে সিনেমার জন্য বিজ্ঞাপনের রেট অনেক কম।
- প্রতি মিনিটের বিজ্ঞাপন রেট: ৫০০ থেকে ১,০০০ টাকা।
- সিনেমা চ্যানেলের ক্ষেত্রে রেট কিছুটা বেশি।
২. **কম খরচে অনুষ্ঠান প্রচার:**
সিনেমা প্রচার টিভি চ্যানেলগুলোর জন্য একটি অর্থ সাশ্রয়ের উপায়। নতুন অনুষ্ঠান তৈরি করতে যেখানে লাখ টাকা ব্যয় হয়, সেখানে সিনেমা প্রচারে খরচ হয় কয়েক হাজার টাকা।
চ্যালেঞ্জ
১. **স্বল্প লাভ:**
সিনেমা প্রচার থেকে টিভি চ্যানেলগুলো বড় ধরনের আয় করতে পারে না। এটি মূলত দর্শকদের চাহিদা পূরণের জন্যই প্রচারিত হয়।
২. **বিজ্ঞাপনের সীমিত চাহিদা:**
সিনেমার জন্য বড় বিজ্ঞাপনী সংস্থাগুলো আগ্রহী নয়। বরং প্যাকেজ ভিত্তিক স্বল্পমূল্যের বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়।
সাপ্লাইয়ারদের ভূমিকা
সিনেমা প্রদর্শনে সাপ্লাইয়াররা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকেন। তারা সিনেমার প্রযোজকদের কাছ থেকে ছবি কিনে টিভি চ্যানেলে সরবরাহ করেন।
- **মুনাফা:**
একেকটি সিনেমা সাপ্লাই করে সাপ্লাইয়াররা গড়ে ৪,০০০ থেকে ৫,০০০ টাকা আয় করেন।
- **বিশিষ্ট সাপ্লাইয়ার:**
বর্তমানে শাওন গাজী, মোশাররফ, আবদুর রউফ, ইউনুস মুন্সীর মতো ১৫-২০ জন সাপ্লাইয়ার এই ব্যবসায় জড়িত।
বিটিভি বনাম বেসরকারি টিভি চ্যানেল
বিটিভি টিভি সিনেমার ব্যবসায় এখনও সবার শীর্ষে। কারণ এটি দর্শকদের কাছে এখনো গ্রহণযোগ্য এবং বিশ্বস্ত।
- বিটিভির সিনেমার জন্য বরাদ্দ মূল্য বেশি।
- তবে বেসরকারি চ্যানেলগুলোর সংখ্যা বেশি হওয়ায় তারা বেশি দর্শক টানার জন্য কম দামে সিনেমা প্রদর্শন করে থাকে।
ভবিষ্যতের সম্ভাবনা
টিভি সিনেমার বাজারে বেশ কিছু সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ বিদ্যমান।
1. **স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মের চ্যালেঞ্জ:**
টিভি সিনেমার দর্শকসংখ্যা দিন দিন কমছে, কারণ মানুষ ওটিটি প্ল্যাটফর্মের দিকে ঝুঁকছে।
2. **টিভি সিনেমার কনটেন্ট উন্নয়ন:**
নতুন দর্শক তৈরি করতে টিভি চ্যানেলগুলোকে সিনেমা প্রচারের মান উন্নত করতে হবে।
বাংলাদেশে টিভি চ্যানেলে সিনেমা প্রদর্শন একটি দীর্ঘ ইতিহাস সমৃদ্ধ ব্যবসা। যদিও বর্তমান সময়ে এটি টিভি চ্যানেলের প্রধান আয়ের উৎস নয়, তবে এটি দর্শক চাহিদা পূরণ এবং ব্যয়ের সাশ্রয়ের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সাপ্লাইয়ারদের সক্রিয় ভূমিকা এবং দর্শকদের চাহিদাই এই বাজারকে এখনও টিকিয়ে রেখেছে। ভবিষ্যতে টেলিভিশন সিনেমার এই ঐতিহ্য ধরে রাখার জন্য নতুন কৌশল অবলম্বন করতে হবে।
**তথ্যসূত্র:**
1. বিটিভি এবং বেসরকারি টিভি চ্যানেলের ইতিহাস।
2. বর্তমান সাপ্লাইয়ারদের অভিজ্ঞতা এবং টিভি মার্কেটিং বিশ্লেষণ।
- Book Reviews & Literary Discussions
- Writing
- Reading List
- Arts and Entertainment
- Personal Development
- Storytelling
- Startup
- Books
- Arts & Crafts
- Dance
- Drinks
- Entertainment & Pop Culture
- Health & Fitness
- Education & Learning
- Food & Cooking
- Oyunlar
- Gardening
- Self-Care & Mental Health
- Home Decor & DIY
- Literature
- Music
- Networking
- Other
- Party
- Philosophy and Religion
- Bahis Yatır
- Shopping
- Relationships & Dating
- Sports
- Theater
- lifestyles & hobbies/shutterbugs
- Lifelong Learning
- Tutorial
- Announcement
- Inspirational Stories & Motivation