একফোঁটা বিশ্বাস থেকে একবিন্দু বিপ্লব

বিশ্বাস—এই ছোট্ট শব্দটার ভেতরে যেন লুকিয়ে আছে এক বিশাল জগত। এটা এমন এক বীজ, যা চোখে দেখা যায় না, কিন্তু যার প্রভাব ছড়িয়ে পড়ে হৃদয়, সম্পর্ক, সমাজ, এমনকি পুরো জীবন জুড়ে। বিশ্বাস এমন এক অদৃশ্য শক্তি, যা মানুষকে ভেঙে দিতে পারে, আবার গড়ে তুলতেও পারে।
ভাবুন তো, একজন কৃষক যখন একটি বীজ বপন করেন, তখন কি তিনি নিশ্চিত থাকেন, সেই বীজ থেকে গাছ হবে? ফল আসবে? কখনোই না। তবুও তিনি পানি দেন, আগাছা পরিষ্কার করেন, প্রতিদিন নিরবিচারে খেয়াল রাখেন। কেন? কারণ তার মনে বিশ্বাস—এই মাটিই একদিন ফল দেবে। জীবনের প্রতিটি স্তরেই এমনই ঘটে।
একটি শিশু যখন হাঁটতে শেখে, প্রতিবার পড়ে গিয়ে আবার উঠে দাঁড়ায়। সে জানে না “পারা” বলতে কী বোঝায়, কিন্তু মা-বাবার চোখে নিজের জন্য যে নির্ভরতা দেখে, সেটাই তার সাহসের ভিত্তি হয়ে ওঠে। সেই ছোট্ট বিশ্বাসই একদিন তাকে ছুটতে শেখায়—জীবনের দৌড়ে।
শিল্পী, লেখক, শিক্ষক, উদ্যোক্তা—প্রত্যেকেই একেকজন নির্ভরশীল বিশ্বাসী। একজন লেখক জানেন না, তার লেখা কেউ পড়বে কিনা। একজন চিত্রশিল্পী জানেন না, তার আঁকা ছবি কেউ বুঝবে কিনা। তবুও তারা থামেন না। কেন? কারণ তাদের ভিতরে কোথাও একটি দৃঢ় বিশ্বাস—একদিন কোনো পাঠকের মনে, কোনো দর্শকের চোখে তাদের সৃষ্টি ছুঁয়ে যাবে।
তবে বিশ্বাস কেবল আবেগ নয়, এটা গভীর মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব ফেলে।
আমাদের বাড়ির পাশের এক কাকার কথা মনে পড়ে। সাপকে তিনি অত্যন্ত ভয় পেতেন। একদিন সন্ধ্যায় হঠাৎ রাস্তায় হাঁটার সময় কঞ্চির গুতা খেলেন। তিনি ভাবলেন, তাকে সাপে কামড়েছে। মুহূর্তের মধ্যে শরীর খারাপ, মাথা ঘোরা, বুক ধড়ফড়। লোকজন তাঁকে দ্রুত এক ওঝার কাছে নিয়ে যায়। ওঝা বোঝেন, ভয়ই তার আসল রোগ। তাই তিনি “মিথ্যা ওষুধ” দিয়ে বলেন, এখন তুমি ঠিক আছো। কিছুক্ষণের মধ্যে কাকা একদম সুস্থ!
এটাই বিশ্বাসের মানসিক দিক—মন যা ভাবে, শরীর তা-ই অনুসরণ করে।
আরেকটি ঘটনা আমার ব্যক্তিগত জীবনের।
২০০৮ সালে ছাত্রজীবনে আমি এক মেসে থাকতাম। মেসমেট ছিল রাসেল তন্ময়—একজন সাধারণ ছেলে, যার উপর পড়াশোনার তেমন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু একটা জিনিস ছিল ওর—আত্মবিশ্বাস। সে প্রায়ই বলত, “আমার বাবা পরের ক্ষেতে কাজ করেছেন। আমি বড় হয়ে কোটিপতি হব।” আমরা তখন হাসতাম, ভাবতাম, স্বপ্ন হয়তো বড় বেশি দেখছে।
পরে সে ডিগ্রি শেষ না করেই গ্রামে ফিরে যায়। যোগাযোগ হারিয়ে যায়।
তারপর ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে হঠাৎ তার ফোন। “ভাই, আমার গ্রামে একবার আয়।”
অবশেষে জানুয়ারির এক শুক্রবার গিয়ে আমি হতবাক! চার রুমের বাড়ি, উপরের তলা নির্মাণাধীন, ২৫ বিঘা জমিতে বিশাল এগ্রো প্রজেক্ট—ফুলকপি, টমেটো, গাজর, ডাল, পটল, আরও কত কী! নিজস্ব ছোট ট্রাক, ১০ জন কর্মচারী, ৮টি গাভি, প্রতিদিন ৫০ লিটার দুধের উৎপাদন।
আমি জিজ্ঞেস করলাম, “তুই এই সব আয়ডিয়া পেলি কোথায়?”
সে হেসে বলল, “টিভিতে শাইক সিরাজের প্রতিবেদন দেখে মোটিভেশন পাই। এরপর আর পেছনে তাকাইনি।”
সেদিন আমার মনে হলো—বিশ্বাসই তাকে এতদূর এনেছে।
সর্বোচ্চ ডিগ্রি নয়, সবচেয়ে বড় মূলধন হচ্ছে নিজের উপর বিশ্বাস।
আজকের সময়টাতে, যেখানে চারপাশে অবিশ্বাসের ধোঁয়াশা, সম্পর্কের টানাপড়েন, মনের দুর্বলতা—তখন সবচেয়ে জরুরি হয়ে উঠেছে এই শক্তিটা।
বিশ্বাস—নিজের ওপর, অন্যের ওপর, জীবনের প্রতি।
বিশ্বাস যে পারে, সেই এগোয়। যে ভাবে “আমি পারি”—তার পেছনে সময়, পরিস্থিতি, মানুষ সবই একদিন দাঁড়ায়।
বিশ্বাস একদিন হয়তো ধীরে আসে,
কিন্তু একবার যদি গভীরে গেঁথে যায়—
তবে সে হয়ে ওঠে এক বিশাল বৃক্ষ,
যার ছায়ায় মানুষ শিখে—
সাহস, ভালোবাসা, ধৈর্য আর আশা নিয়ে বাঁচতে।
🔹 শেষকথা
বিশ্বাস ভাঙা যায়, কিন্তু একবার গড়ে উঠলে তা জীবনের পথে এক অমূল্য শক্তি। আমাদের প্রতিদিনের জীবন, কাজ, সম্পর্ক—সবকিছুই দাঁড়িয়ে থাকে এই বিশ্বাসের অদৃশ্য ভিত্তির ওপর।
আপনি যেটা বিশ্বাস করেন, জীবন একদিন সেটা আপনার হাতে তুলে দিতেই বাধ্য।
- Book Reviews & Literary Discussions
- Writing
- Reading List
- Arts and Entertainment
- Personal Development
- Storytelling
- Startup
- Books
- Biography
- Dance
- Drinks
- Entertainment & Pop Culture
- Health & Fitness
- Education & Learning
- Food & Cooking
- Jogos
- Gardening
- Self-Care & Mental Health
- Home Decor & DIY
- Literature
- Music
- Networking
- Outro
- Party
- Philosophy and Religion
- Local
- Shopping
- Relationships & Dating
- Sports
- Theater
- lifestyles & hobbies/shutterbugs
- Lifelong Learning
- Tutorial
- Announcement
- Inspirational Stories & Motivation