যারা অন্যের সমালোচনা করে

0
1K

আমাদের আশেপাশে কিছু মানুষ সবসময়ই থাকে, যাদের একমাত্র কাজ হলো—অন্যের ভুল খোঁজা, সাফল্যে সন্দেহ ছুঁড়ে দেওয়া, চেষ্টা নিয়ে ঠাট্টা করা। তারা যেন জীবনের গোপন এক আনন্দ খুঁজে পায় অন্যের ব্যর্থতায়। অন্যদিকে, কিছু মানুষ আছেন—যারা বলেন, "ভালো করেছো, তবে আরও ভালো করার সুযোগ আছে। পাশে আছি!"

এই দুই প্রকার মানুষই সমালোচক। কিন্তু তাদের মাঝে আকাশ-পাতাল পার্থক্য।

নেগেটিভ সমালোচনা: ভাঙার জন্য তিরস্কার

একজন ছাত্রী একদিন সাহস করে স্টেজে উঠে কবিতা পড়লো। উচ্চারণ হয়তো পুরো ঠিক ছিল না, হাতে একটু কাঁপনও ছিল। মঞ্চ থেকে নামার পর এক অভিভাবক বললেন—“তোমার তো গলারই জোর নেই, এভাবে আর কবিতা পড়ে কে?”
মেয়েটি এরপর আর কখনো মঞ্চে ওঠেনি।

এই ধরনের সমালোচনা হলো নেগেটিভ—যেটা শুধু কষ্ট দেয়, ভাঙে, থামিয়ে দেয়। এতে গড়ার কোনো উদ্দেশ্য থাকে না। উদ্দেশ্য শুধু নিজের ‘বোঝা’ জাহির করা।

নেগেটিভ সমালোচনার কিছু বৈশিষ্ট্য:

  • অপমানজনক ভাষা ব্যবহার

  • অন্যকে নিচু দেখিয়ে নিজেকে বড় ভাবা

  • ব্যক্তিগত আক্রমণ

  • হাস্যকর বা কটাক্ষমূলক উপস্থাপন

  • ভবিষ্যতের সম্ভাবনা ধ্বংস করে ফেলা

পজিটিভ সমালোচনা: গড়ার জন্য দিকনির্দেশনা

অন্যদিকে, ধরুন একজন শিক্ষক একই মেয়েটিকে বললেন, “তোমার কণ্ঠে কবিতার আবেগটা ছিল অসাধারণ। তবে তুমি যদি আয়নার সামনে প্রতিদিন ৫ মিনিট উচ্চারণ অনুশীলন করো, আরও ভালো করবে!”
এই কথা মেয়েটির আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দিল। সে ঘরে ফিরে অনুশীলন শুরু করলো, পরে এক প্রতিযোগিতায় পুরস্কারও পেল।

এটাই পজিটিভ সমালোচনা—যেটা সাময়িক দুর্বলতা চিনিয়ে দেয়, কিন্তু ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার আলো দেখায়।

পজিটিভ সমালোচনার বৈশিষ্ট্য:

  • সম্মানজনক ভঙ্গি

  • সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধানের পরামর্শ

  • উৎসাহ প্রদান

  • ব্যক্তি নয়, কাজ নিয়ে মতামত

  • উন্নতির রাস্তা দেখানো

আমরা কোন পথে চলছি?

সমস্যা হলো—আমরা অনেক সময় না বুঝেই নেতিবাচক সমালোচনায় অভ্যস্ত হয়ে পড়ি। বন্ধু কোনো নতুন কিছু শুরু করলেই বলি, “এগুলো করে কী হবে?”, “এত বড় স্বপ্ন দেখা তোমার নয়!”, “পোস্ট দিয়ে কী পাও?”
আসলে এই কথাগুলো অনেক সময় আমাদের ভেতরের ভয়, হীনমন্যতা, বা ঈর্ষারই প্রকাশ।

একটা ছোট উদ্যোগ শুরু করা, একটা বই লেখা, একটা ভিডিও বানানো, একটা গানের কভার প্রকাশ করা—সবই সাহসের কাজ। যারা চেষ্টা করছে, তারা নিজেদের সীমার বাইরে যাচ্ছে। আর যারা কেবল সমালোচনা করছে, তারা সেই চেষ্টাকেই ভয় পায়।

নিজের আয়নায় ফিরে তাকানো

আমরা যদি সত্যিই চাই সমাজে প্রতিভা গড়ে উঠুক, মানুষ এগিয়ে যাক, তবে আমাদের উচিত—

সবচেয়ে বড় কথা—যে সমালোচনা গড়তে পারে, সেটা একটা উপহার। আর যে সমালোচনা কেবল ভাঙে, সেটা একধরনের বিষ।

সমালোচনা দুই রকম—একটি পথ দেখায়, আরেকটি পথ আটকে দেয়। আমাদের সমাজে এখন সবচেয়ে বেশি দরকার গঠনমূলক শব্দ, সহযোগিতার মনোভাব এবং একে অন্যকে এগিয়ে যাওয়ার সাহস দেওয়ার সংস্কৃতি
আমরা যদি চাই, আমাদের সন্তান, আমাদের বন্ধুবান্ধব, আমাদের সমাজ এগিয়ে যাক—তবে আমাদের প্রতিক্রিয়ায় ভালোবাসা, শ্রদ্ধা ও ইতিবাচক সমালোচনার সুর থাকা জরুরি।

তবেই হয়তো কোনো রাজীব, কোনো মুনিয়া, কোনো শান্তা আর থেমে যাবে না কারো কটুক্তিতে।
তারা সামনে এগিয়ে যাবে—আপন আলোয়, নিজের স্বপ্নে, আর আমাদের ভালোবাসায়।

Site içinde arama yapın
Sponsorluk
Kategoriler
Read More
Tutorial
কীভাবে নিজের লেখা পাঠকের কাছে পৌঁছাবেন?
লেখালেখি কেবল সৃজনশীলতার প্রকাশ নয়; এটি একটি শক্তিশালী যোগাযোগ মাধ্যম। একটি ভালো লেখা তখনই...
By Bookworm Bangladesh 2024-12-03 08:27:33 0 2K
Philosophy and Religion
Understanding the Order of the Eastern Star: A Comprehensive Overview
The Order of the Eastern Star, often abbreviated as OES, is a unique and esteemed fraternal...
By Lisa Resnick 2023-09-08 11:48:56 3 14K
Reading List
What does A Bookworm Look Like?
In a world brimming with diverse interests and hobbies, one archetype stands out as timeless: the...
By Razib Paul 2024-02-16 10:47:10 2 8K
Lifelong Learning
Otterbein Lifelong Learning Community
Founded in 1847 in Westerville, Ohio, Otterbein University is a distinguished private liberal...
By ATReads Editorial Team 2025-03-11 14:38:12 1 2K
Tutorial
লেখার সময় কোন ভুলগুলো এড়িয়ে চলতে হয়
লেখালেখি একটি শিল্প। এটি পাঠকের হৃদয়ে জায়গা করে নেওয়ার ক্ষমতা রাখে, কিন্তু এই লক্ষ্য অর্জন করতে...
By WriteAhead Bangladesh 2024-12-03 08:18:35 0 2K
AT Reads https://atreads.com