লেখালেখির সাজসজ্জা

0
5KB

লেখালেখি কেবল অনুভূতির বহিঃপ্রকাশ নয়—এটি একপ্রকার নৈপুণ্য। যেমন একজন চিত্রশিল্পী ক্যানভাসে তুলির আচরে সৃষ্টি করেন শিল্প, তেমনি একজন লেখক শব্দের গাঁথুনিতে নির্মাণ করেন বোধের দালান। তবে শুধু ভাব থাকলেই চলে না, লেখায় চাই গঠন, ছন্দ, পরিপাটি উপস্থাপন—যাকে আমরা বলি ‘লেখালেখির সাজসজ্জা’

চলুন, দেখি কীভাবে আপনার লেখাও হয়ে উঠতে পারে পাঠকের মনে গেঁথে যাওয়ার মতো সুন্দর ও ছন্দময়।


১. আকর্ষণীয় সূচনা: প্রথমেই মন জয়

একটি চমৎকার লেখা শুরু হয় একটি প্রলোভনসৃষ্টিকারী সূচনার মাধ্যমে। এটি হতে পারে কোনো প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন, চমকে দেওয়া তথ্য, সংলাপ, বা জীবনঘনিষ্ঠ অভিজ্ঞতা।
সুন্দর সূচনা মানেই পাঠককে আমন্ত্রণ জানানো—“এসো, আমার ভাবনার জগতে পা রাখো।”


 ২. অনুচ্ছেদ বিন্যাস: লেখায় শ্বাস ফেলার সুযোগ

প্রতিটি অনুচ্ছেদ যেন লেখার শ্বাস। বড়ো, ঘন, ও একটানা অনুচ্ছেদ পাঠককে ক্লান্ত করে তোলে। একটি ভাবকে একটি অনুচ্ছেদে সীমাবদ্ধ রাখলে লেখাটি হয়ে ওঠে পরিচ্ছন্ন, পরিপাটি, আর পাঠযোগ্য।

কৌশল:

  • প্রতি অনুচ্ছেদে একটি মূল পয়েন্ট

  • প্যারাগ্রাফের মাঝে খালি লাইন

  • প্রয়োজনে Bullet বা Numbered List


 ৩. শিরোনাম ও উপশিরোনাম: লেখার ম্যাপ

শিরোনাম ও সাবহেডিং হলো লেখার দিকনির্দেশক।
সেগুলো পাঠককে বলে দেয়—এই অংশে কী পাবেন। এটি শুধু গঠনগত সৌন্দর্যই নয়, পাঠকের চোখে লেখাকে করে তোলে সহজপাঠ্য ও আকর্ষণীয়।


 ৪. ভাষার শৈলী ও বাক্যের বৈচিত্র্য

লেখায় থাকা চাই ছন্দ ও স্বাচ্ছন্দ্য। দীর্ঘ বাক্যের মাঝে হঠাৎ একটি ছোট বাক্য—এমন বৈচিত্র্য লেখাকে দেয় স্পন্দন। পুনরাবৃত্তি এড়িয়ে চলে শব্দের খেলায় আনা যেতে পারে অলংকারের ঝিলিক। তবে অলংকারের ব্যবহার যেন না হয় বাহুল্যপূর্ণ।


 ৫. প্রুফরিডিং: লেখার আয়নায় মুখ দেখা

লেখা শেষ মানেই কাজ শেষ নয়। লেখাটিকে পড়ে দেখা, প্রয়োজনে জুড়ে দেওয়া বা বাদ দেওয়া—এটাই লেখার আত্মশুদ্ধি। বানান, বিরামচিহ্ন, সময়ের সামঞ্জস্য, ভাবের ধারাবাহিকতা—সবই খেয়াল রাখতে হবে।
একটি ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ: নিজের লেখা কিছু সময় পর পড়ে দেখলে ভুল ধরা পড়ে সহজে।


 ৬. ডিজিটাল লেখায় টাইপোগ্রাফি

অনলাইন লেখালেখিতে ফন্ট সাইজ, লাইন স্পেসিং, কালার, ইমোজি ও হেডিং ব্যবহারে চোখে পড়ার মতো নান্দনিকতা আনতে পারেন।
পাঠকের চোখ যেন কষ্ট না পায়—এই সহজ দৃষ্টিভঙ্গি আপনাকে করে তুলবে সচেতন লেখক।


 ৭. শেষ কথা ও পাঠকের আহ্বান

একটি লেখার শেষ যেন হয় পাঠকের মনে দীর্ঘশ্বাসের মতো—“আহা, ভালো লাগল!”
শেষে ছোট করে মূল বার্তাটি তুলে ধরুন। পাঠকের কাছে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিন, মতামত জানানোর আহ্বান রাখুন—এই সংলাপ তৈরি করে লেখক-পাঠক বন্ধন।


 লেখা নয়, যেন শিল্পকর্ম

লেখালেখির সাজসজ্জা মানে হলো—ভাবনাকে এমনভাবে উপস্থাপন করা, যাতে পাঠক থমকে পড়ে, থেমে পড়ে, এবং ভেবে ওঠে। শব্দ তো অনেকেই লেখেন, কিন্তু কারও লেখা স্মরণীয় হয়, হৃদয়ে জায়গা করে নেয়—এটাই লেখার সাজসজ্জার মাহাত্ম্য।

যদি আপনি লেখক হতে চান, তবে কেবল হৃদয়ের কথা নয়, হৃদয়ের কথাকে রূপ দেয়ার কৌশলটাও আয়ত্ত করুন। তবেই আপনার লেখাও হয়ে উঠবে শিল্পের মতো।

Suche
Gesponsert
Kategorien
Mehr lesen
Book Reviews & Literary Discussions
অপেক্ষা বই রিভিউ
অপেক্ষা: এক নিরেট অপেক্ষার গল্প অপেক্ষা। শব্দটা যতটা সাধারণ, ততটাই গভীর। অপেক্ষার ভেতর লুকিয়ে...
Von Bookworm Bangladesh 2024-12-02 05:18:09 0 4KB
Literature
বাঙ্গলাদেশের ভোটে কবিদের অংশ গ্রহন, ও রাজনীতির হিসাব।
ভোট একটি মহৎ কাজ, একটি দেশের ভবিষ্যত্তা নির্ধারণ হয়। বাংলাদেশে ভোটের দিনগুলি একটি অত্যন্ত...
Von Razib Paul 2023-12-26 08:50:35 2 13KB
Books
Unveiling the Secrets of Rare Book Collecting in Bangladesh
In the bibliophilic landscape of Bangladesh, where the love for literature is deeply ingrained in...
Von Bookworm Bangladesh 2024-01-10 13:33:08 0 10KB
Storytelling
Unlocking the Power of Internal Storytelling: A Deep Dive into Its Benefits
Storytelling is a fundamental aspect of human communication and culture. From the ancient oral...
Von Megan Holman 2023-09-27 14:58:07 0 17KB
Reading List
Exploring the Diverse World of Book Enthusiasts: An In-Depth Look at Different Types of Book Lovers
In the vast and wonderful universe of literature, one finds a community that is as diverse as the...
Von Libby Kathi 2023-09-30 16:35:18 0 19KB
AT Reads https://atreads.com