খলিষখালী বাজারের ঐতিহ্যবাহী দুধের হাট: দুই শতাব্দীর ইতিহাসের সাক্ষী

0
16K

খলিষখালী বাজারের অন্যতম প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী অংশ হলো দুধের হাট। জমিদার আমল থেকে শুরু হওয়া এই দুধ বাজার এখনো বহমান, প্রতিদিন গ্রামীণ অর্থনীতির চাকা সচল রাখছে এবং অসংখ্য পরিবারের জীবিকা নির্বাহের উৎস হয়ে উঠেছে।

দুধ বাজারের প্রতিদিনের চিত্র

প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে খলিষখালীর এই ঐতিহ্যবাহী দুধ বাজার জমতে শুরু করে। এলাকার ১৫ থেকে ২০টি গ্রামের পুরুষ ও মহিলারা দলবেঁধে দুধ বিক্রি করতে আসেন। দেশি গাভির মালিকরা ২-৩ কেজি দুধ নিয়ে আসেন, আর উন্নত জাতের ফ্রিজিয়ান ও অস্ট্রেলিয়ান গাভি থেকে পাওয়া ১৫-২০ কেজি দুধ বাজারে ওঠে।

দুধ ব্যবসায়ী, ঘোষ মশাই ও পাইকাররা দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসেন খলিষখালী বাজারে, কারণ এখানকার দুধ মানসম্মত এবং সহজলভ্য। বালক-বালিকা থেকে শুরু করে গৃহবধূ ও পুরুষ সবাই মিলে জগ, পুরানো মাটির কলস, প্লাস্টিকের বালতি ভরে দুধ নিয়ে আসেন।

২০০ বছরের ঐতিহ্য

ইতিহাস থেকে জানা যায়, প্রায় ২০০ বছর আগে খলিষখালীর এই দুধ বাজার প্রতিষ্ঠিত হয়। বাজারের বটতলা এলাকাটি এখনো ‘দুধ বাজার’ নামে পরিচিত। এলাকার কেউ যদি যেকোনো অনুষ্ঠানের জন্য দুধের প্রয়োজন অনুভব করেন, তবে তাদের প্রথম গন্তব্য হয় এই বাজার।

অর্থনৈতিক উন্নয়নে দুধ বাজারের ভূমিকা

খলিষখালী দুধ বাজার শুধু স্থানীয় পর্যায়ের বেচাকেনার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এখান থেকে ব্যবসায়ীরা দুধ সংগ্রহ করে দেশের বিভিন্ন জেলার কারখানায় পাঠিয়ে থাকেন। এই বাজারের দুধ দিয়ে তৈরি মিষ্টির সুনাম দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে আছে।

এখান থেকে তৈরি হয়—
সন্দেশ
দই
চমচম
দানাদার
ছানার জিলাপি
রাজভোগ
পেড়া সন্দেশ

খলিষখালীর মিষ্টি ও দুগ্ধজাত পণ্য সাতক্ষীরা, খুলনা, পিরোজপুর, বরিশাল, যশোর, মাগুরা, ফরিদপুর, ঝিনাইদহ, পাইকগাছা, কপিলমুনি, আশাশুনি, শ্যামনগর, কালিগঞ্জসহ দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করা হয়

দুধ ব্যবসায়ীদের জীবনযাত্রায় পরিবর্তন

দুধ বাজার শুধুমাত্র একটি ক্রয়-বিক্রয় কেন্দ্র নয়, এটি অনেক পরিবারের অর্থনৈতিক মুক্তির গল্পও বহন করে। দুধ ব্যবসায়ী শ্যামল ঘোষ, যিনি ৩০ বছর ধরে এই বাজার থেকে দুধ কিনে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন, তিনি জানান—

"এক সময় ১০ টাকা সেরে দুধ কিনতাম, এখন সেই দুধ কিনতে হয় ৫০-৫৫ টাকা দরে। তবে এই ব্যবসা আমাকে এবং আমার পরিবারকে স্বচ্ছলতা এনে দিয়েছে।"

উপসংহার

খলিষখালী বাজারের দুধের হাট শুধু একটি বাজার নয়, এটি ইতিহাসের অংশ, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির উৎস এবং জীবনের চালিকা শক্তি। দুই শতাব্দী ধরে এই বাজার যেমন মানুষের আস্থার প্রতীক হয়ে টিকে আছে, তেমনি ভবিষ্যতেও এটি খলিষখালীর অর্থনৈতিক গতিশীলতার গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে ভূমিকা রাখবে।

 

Like
Love
4
AT Reads https://atreads.com