ইলমা বেহরোজ এর পরিচয়(Elma Behrouz)

0
314

গল্পের জগতে এক স্বপ্নবাজ পথিক

সাহিত্য সেই জগৎ, যেখানে শব্দেরা বুনে যায় অনুভূতির মায়াজাল, কল্পনার আকাশ যেখানে সীমাহীন, আর একেকজন লেখক হয়ে ওঠেন একেকজন গল্পকার, যাঁরা পাঠকদের ভিন্ন এক জগতে নিয়ে যান। সেই জগতের এক নবীন অথচ প্রতিশ্রুতিশীল পথিক হলেন ইলমা বেহরোজ। তার লেখার প্রতি ভালোবাসা, কল্পনার শক্তি ও পাঠকের সঙ্গে সংযোগ গড়ে তোলার ক্ষমতা তাকে ধীরে ধীরে এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে দিচ্ছে।

২০০৩ সালের ১৮ জুলাই নেত্রকোনায় জন্ম নেওয়া ইলমা বেড়ে উঠেছেন সিলেটের মনোরম পরিবেশে। ছোটবেলা থেকেই তার কল্পনাশক্তি ছিল অসাধারণ। গল্পের বইয়ের প্রতি প্রবল আকর্ষণ ছিল তার সবচেয়ে বড় পরিচয়। অন্য শিশুরা যখন খেলাধুলায় ব্যস্ত, তখন ইলমা হারিয়ে যেতেন বইয়ের পাতায়। স্কুলের ফাঁকে লুকিয়ে বই পড়ার কারণে তাকে অসংখ্যবার গুরুজনদের বকুনি খেতে হয়েছে, তবুও বইয়ের প্রতি সেই টান কখনো কমেনি। বরং গল্পের চরিত্রদের নিয়ে নতুন করে ভাবতে ভালোবাসতেন, সমাপ্ত গল্পগুলোর নতুন পরিণতি নিজের কল্পনায় তৈরি করতেন।

এই স্বপ্নময় কল্পনাগুলোকেই একসময় তিনি শব্দের বাঁধনে আটকে রাখতে শুরু করেন। যখন তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখালেখির জগৎ আবিষ্কার করলেন, তখন তার ভেতরে সুপ্ত থাকা সাহিত্যিক সত্তাটি যেন জেগে উঠল। মানুষ যখন নিজের মনের ভাব প্রকাশের জন্য শব্দকে আশ্রয় করে, তখন সেটি হয়ে ওঠে এক ধরনের মুক্তি। ইলমার ক্ষেত্রেও ঠিক তেমনটাই ঘটেছিল। তিনি তার কল্পনার রং ছড়িয়ে দিলেন গল্পের পাতায়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজের গল্পগুলো প্রকাশ করতে শুরু করলেন। পাঠকদের কাছ থেকে উষ্ণ সাড়া পেয়ে তার আত্মবিশ্বাস আরও দৃঢ় হলো।

একজন লেখকের প্রধান শক্তি হলো পাঠকের মন জয় করার ক্ষমতা, আর ইলমা সেই শক্তির অধিকারী। তার লেখায় থাকে সহজাত কল্পনা, আবেগের গভীরতা, আর বাস্তবতার ছোঁয়া। তাই তার লেখা পাঠকদের হৃদয়ে জায়গা করে নিতে বেশি সময় নেয়নি। ধীরে ধীরে তার লেখা আরও পরিণত হতে লাগল, কল্পনাগুলো পেল দৃঢ় রূপ, ভাষা হয়ে উঠল আরও শাণিত।

এই সাহিত্যযাত্রাকে আরেক ধাপ এগিয়ে নিতে এবং পাঠকদের প্রতি তার ভালোবাসার নিদর্শনস্বরূপ তিনি প্রকাশ করলেন তার প্রথম বই ‘মায়ামৃগ’। এই বই শুধু তার লেখকসত্তার প্রকাশ নয়, বরং এটি তার স্বপ্নের বাস্তবায়ন, তার পরিশ্রমের প্রতিফলন। মায়ার জগৎ, রহস্যময় কাহিনি আর চরিত্রদের গভীর অনুভূতির মিশেলে বইটি পাঠকদের হৃদয় জয় করতে সক্ষম হয়েছে।

ইলমা বেহরোজের লেখায় পাওয়া যায় বাস্তবতা ও কল্পনার দারুণ মিশ্রণ। তার গল্পের চরিত্ররা জীবন্ত হয়ে ওঠে, পাঠক তাদের অনুভূতি, যন্ত্রণা ও আনন্দকে নিজের ভেতরে অনুভব করতে পারেন। এটাই তার লেখার অন্যতম বিশেষত্ব—তিনি গল্প বলেন, কিন্তু সেই গল্প শুধু গল্প থাকে না, তা পাঠকের হৃদয়ে এক গভীর অনুভূতি সৃষ্টি করে।

ইলমার এই সাহিত্যিক যাত্রা কেবল শুরু হয়েছে, এর গন্তব্য অনেক দূর। নতুন প্রজন্মের লেখক হিসেবে তিনি ইতোমধ্যেই তার জায়গা করে নিতে শুরু করেছেন। ভবিষ্যতে আরও নতুন নতুন কাহিনি, নতুন নতুন চরিত্রের মাধ্যমে তিনি পাঠকদের মুগ্ধ করবেন, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

 

একজন লেখক তখনই সফল হন, যখন তার লেখা মানুষের মনে দাগ কাটে, তাদের ভাবতে শেখায়, অনুভূতির গভীরে স্পর্শ করে। ইলমা বেহরোজের লেখনী সেই পথেই এগিয়ে চলেছে। ভবিষ্যতে তার কলম থেকে বেরিয়ে আসুক আরও অনবদ্য সব গল্প, তার সাহিত্যযাত্রা হোক আরও সমৃদ্ধ, এই প্রত্যাশাই রইল।

Like
Yay
3
Pesquisar
Patrocinado
Categorias
Leia mais
Literature
সাহিত্যের প্রধান লক্ষণ কোনটি?
সাহিত্যের প্রধান লক্ষণ কোনটি সাহিত্য মানব সভ্যতার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সৃষ্টি। এটি মানুষের আবেগ,...
Por Knowledge Sharing Bangladesh 2024-12-03 13:48:21 0 1KB
Writing
বইয়ের পাতায় শুকনো গোলাপ
পুরনো বইয়ের পাতা উল্টাতে গিয়ে হঠাৎ চোখে পড়ে এক টুকরো স্মৃতি—একটা শুকনো গোলাপ। রঙ হারিয়ে...
Por Razib Paul 2025-03-06 07:06:28 1 349
Literature
বুকওয়ার্ম বাংলাদেশ(Bookworm Bangladesh)
বাংলাদেশে বুকওয়ার্ম বা বইপ্রেমীদের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। বই পড়া, লেখা, এবং চিন্তা-ভাবনা...
Por Bookworm Bangladesh 2024-12-01 08:00:56 0 1KB
Personal Development
শর্তযুক্ত তথ্য খোঁজা সংরক্ষণ ও প্রদর্শন করাকে কি বলে?
আজকের তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর বিশ্বে তথ্যের কার্যকর সংরক্ষণ, দ্রুত অনুসন্ধান এবং সঠিক প্রদর্শনের...
Por Knowledge Sharing Bangladesh 2024-12-17 12:06:55 4 1KB
Literature
উমেশচন্দ্র পাবলিক লাইব্রেরি, খুলনা
গত নভেম্বর মাসে খুলনার ব্যাংকপাড়া জাহিদুর রহমান সড়কে অবস্থিত উমেশচন্দ্র পাবলিক লাইব্রেরি...
Por Razib Paul 2024-12-13 05:59:25 1 1KB