Das Capital গ্রন্থের লেখক কে?

2
2KB

দাস ক্যাপিটালের লেখক কে?

"দাস ক্যাপিটাল" (Das Kapital) হলো একটি বিখ্যাত রাজনৈতিক অর্থনীতিবিষয়ক বই, যার লেখক কার্ল মার্কস। এই গ্রন্থটি অর্থনীতি, সমাজতন্ত্র, পুঁজিবাদ এবং শ্রমিক শ্রেণির অধিকার নিয়ে আলোচনা করে। কার্ল মার্কসের চিন্তাধারার ভিত্তি হিসেবে দাস ক্যাপিটাল আধুনিক অর্থনৈতিক ও সমাজতাত্ত্বিক বিশ্লেষণের একটি মাইলফলক। এটি শুধু একটি বই নয়; এটি একটি বিপ্লবী ধারণার ভিত্তি যা বিশ্বজুড়ে শ্রমিক আন্দোলন এবং সমাজতান্ত্রিক চিন্তাধারায় গভীর প্রভাব ফেলেছে।


কার্ল মার্কস: লেখক পরিচিতি

কার্ল মার্কস একজন জার্মান দার্শনিক, অর্থনীতিবিদ, সমাজবিজ্ঞানী, ইতিহাসবিদ, সাংবাদিক এবং বিপ্লবী চিন্তাবিদ। ১৮১৮ সালের ৫ মে জার্মানির ট্রিয়ারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা ছিলেন একজন আইনজীবী, এবং পরিবারের প্রেরণায় ছোটবেলা থেকেই শিক্ষার প্রতি আগ্রহী ছিলেন মার্কস। তিনি প্রথমে আইনশাস্ত্র নিয়ে পড়াশোনা শুরু করলেও পরবর্তীতে দর্শনশাস্ত্র এবং অর্থনীতির প্রতি গভীর মনোযোগ দেন।

তার দার্শনিক চিন্তাধারা হেগেলের দ্বান্দ্বিকতার ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠলেও, তিনি সেটি সংশোধন করে নিজের উপযোগী করে তোলেন। মার্কস তার বন্ধু ফ্রিডরিখ এঙ্গেলসের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করেন এবং তাদের যুগলবন্দি থেকে সৃষ্টি হয় "কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টো" (The Communist Manifesto) সহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ রচনা।

দাস ক্যাপিটাল কি নামে পরিচিত?

"দাস ক্যাপিটাল" হলো "Capital: Critique of Political Economy" নামে পরিচিত। এটি একটি অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষণ, যেখানে পুঁজিবাদের মৌলিক কাঠামো, তার অন্তর্নিহিত শোষণ এবং এর পতনের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।


দাস ক্যাপিটাল কবে প্রকাশিত হয়?

"দাস ক্যাপিটাল"-এর প্রথম খণ্ড প্রকাশিত হয় ১৮৬৭ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর। কার্ল মার্কস তার জীবদ্দশায় শুধু প্রথম খণ্ডই প্রকাশ করতে পেরেছিলেন। দ্বিতীয় এবং তৃতীয় খণ্ড পরবর্তীতে ফ্রিডরিখ এঙ্গেলস সম্পাদনা করে প্রকাশ করেন।


দাস ক্যাপিটালের প্রকাশকাল ও প্রেক্ষাপট

দাস ক্যাপিটালের প্রথম খণ্ড প্রকাশিত হয় ১৮৬৭ সালে। মার্কসের জীবদ্দশায় এই এক খণ্ডই প্রকাশিত হয়। দ্বিতীয় ও তৃতীয় খণ্ড মার্কসের মৃত্যুর পর তার বন্ধু ফ্রিডরিখ এঙ্গেলস সম্পাদনা করে প্রকাশ করেন।

এটি মূলত পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক ব্যবস্থার বিশ্লেষণ। মার্কস শ্রমিকদের প্রতি পুঁজিপতিদের শোষণ এবং মুনাফা অর্জনের প্রক্রিয়াকে তুলে ধরেন। তার মতে, পুঁজিবাদের ভিত্তি হলো মুনাফা অর্জন, যা শ্রমিকদের শ্রমশক্তিকে শোষণের মাধ্যমে অর্জিত হয়।


দাস ক্যাপিটালের মূল বিষয়বস্তু

১. মূলধন ও তার উৎপত্তি
মার্কস মূলধন (Capital) বা পুঁজি কীভাবে তৈরি হয় তা ব্যাখ্যা করেন। তিনি বলেন, পুঁজির ভিত্তি হলো মানুষের শ্রম। শ্রমিকরা তাদের শ্রমশক্তি বিক্রি করেন, কিন্তু তাদের শ্রমের প্রকৃত মূল্য তারা পান না। এই অতিরিক্ত মূল্য বা "সারপ্লাস ভ্যালু" (Surplus Value) হলো পুঁজিপতিদের মুনাফার উৎস।

২. শ্রমিক ও শোষণ
মার্কস দেখিয়েছেন, পুঁজিবাদী সমাজে শ্রমিক শ্রেণি সবসময় শোষিত হয়। শ্রমিকরা তাদের শ্রমের পূর্ণ মূল্য পান না, কারণ পুঁজিপতিরা তাদের শ্রমশক্তিকে ব্যবহার করে মুনাফা অর্জন করে। এটি একটি দ্বান্দ্বিক সম্পর্ক তৈরি করে, যেখানে শ্রমিক এবং পুঁজিপতির মধ্যে স্বার্থের সংঘাত থাকে।

৩. বাজার ব্যবস্থা ও সংকট
মার্কস পুঁজিবাদী অর্থনীতির সংকট নিয়ে আলোচনা করেছেন। তার মতে, পুঁজিবাদের প্রাকৃতিক প্রবণতা হলো সংকট তৈরি করা। যখন উৎপাদন অনেক বেড়ে যায় কিন্তু শ্রমিকদের আয় কম থাকে, তখন পণ্যের চাহিদা কমে যায় এবং অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দেয়।

৪. পুঁজিবাদের পতন ও সমাজতন্ত্রের উত্থান
মার্কস বিশ্বাস করতেন, পুঁজিবাদ তার স্বাভাবিক গতিতেই ধ্বংস হয়ে যাবে এবং এর পরিবর্তে একটি সাম্যবাদী সমাজ প্রতিষ্ঠিত হবে। এই নতুন সমাজে কোনো শোষণ থাকবে না, এবং উৎপাদন ব্যবস্থা হবে সমান ভিত্তিতে।


দাস ক্যাপিটালের তাৎপর্য

রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে

দাস ক্যাপিটাল বিভিন্ন দেশের শ্রমিক আন্দোলন এবং সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। বিশেষ করে রাশিয়ার অক্টোবর বিপ্লবের পেছনে দাস ক্যাপিটালের প্রভাব সুস্পষ্ট।

অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে

এই বই পুঁজিবাদী অর্থনীতির মৌলিক দুর্বলতাগুলো চিহ্নিত করে। এটি অর্থনীতির আধ্যাত্মিক দিক এবং উৎপাদন ব্যবস্থার গভীর বিশ্লেষণ প্রদান করে।

দার্শনিক দৃষ্টিকোণ থেকে

মার্কসের ঐতিহাসিক বস্তুবাদ বা "হিস্টোরিক্যাল ম্যাটেরিয়ালিজম" দাস ক্যাপিটালের মূল ভিত্তি। এটি ইতিহাসকে অর্থনৈতিক কাঠামোর ওপর ভিত্তি করে ব্যাখ্যা করে।


কার্ল মার্কসের প্রভাব ও সমালোচনা

দাস ক্যাপিটাল প্রকাশের পর মার্কস এবং তার তত্ত্ব বিশ্বজুড়ে আলোচিত হয়। একদিকে এটি শ্রমিক শ্রেণির মুক্তির জন্য একটি আদর্শ হিসেবে দেখা হয়, অন্যদিকে কিছু পুঁজিবাদী চিন্তাবিদ এই তত্ত্বকে অবাস্তব এবং অতিরিক্ত আদর্শবাদী বলে সমালোচনা করেন।

সমালোচনা

১. মার্কসের তত্ত্বে ব্যক্তিগত উদ্যোগ এবং উদ্ভাবনের ভূমিকা কম গুরুত্ব পেয়েছে।
২. পুঁজিবাদ পুরোপুরি ধ্বংস হবে এবং সমাজতন্ত্র আবশ্যিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হবে—এই ধারণা বাস্তবে সবসময় কার্যকর হয়নি।
৩. সমকালীন বিশ্বে কিছু সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা ব্যর্থ হওয়ার কারণে মার্কসের তত্ত্ব নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে।

প্রভাব

১. বিভিন্ন দেশের শ্রমিক আন্দোলন এবং সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবে দাস ক্যাপিটাল অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে।
২. একুশ শতকের শুরুতেও বৈষম্য, শ্রমিক অধিকার এবং পুঁজিবাদের সীমাবদ্ধতা নিয়ে আলোচনায় মার্কসের তত্ত্ব প্রাসঙ্গিক।
৩. একাডেমিক জগতে অর্থনীতি ও সমাজবিজ্ঞানে মার্কসবাদ একটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গা দখল করে আছে।


বাংলাদেশ ও দাস ক্যাপিটাল

বাংলাদেশে দাস ক্যাপিটালের প্রভাব সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন ও শ্রমিক রাজনীতিতে প্রতিফলিত হয়েছে। বিশেষ করে ঊনিশ শতকের শেষে এবং বিশ শতকের শুরুতে মার্কসের তত্ত্ব শ্রমিকদের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করে।

এছাড়া বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় মার্কসবাদ একটি বিশ্লেষণী পদ্ধতি হিসেবে পড়ানো হয়। সমাজতত্ত্ব, রাষ্ট্রবিজ্ঞান এবং অর্থনীতি বিষয়ে গবেষণায় দাস ক্যাপিটালের গুরুত্ব রয়েছে।

ATReads-এ জয়েন করুন: বই নিয়ে নতুন দিগন্তে প্রবেশ

আপনি যদি বই পড়তে ভালোবাসেন এবং বই নিয়ে নিজের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিতে চান, তবে ATReads আপনার জন্য আদর্শ প্ল্যাটফর্ম। এখানে আপনি করতে পারেন:

  1. বুক রিভিউ লিখুন:
    যেমন, দাস ক্যাপিটাল নিয়ে নিজের বিশ্লেষণ লিখে পাঠকদের জন্য সহজ ব্যাখ্যা উপস্থাপন করতে পারেন।

  2. বই প্রমোশন করুন:
    আপনার প্রিয় বইটি অন্যদের কাছে পরিচিত করতে ATReads ব্যবহার করুন। এটি নতুন লেখকদের জন্য একটি চমৎকার প্ল্যাটফর্ম।

  3. আর্টিকেল লিখুন:
    পুঁজিবাদ, সমাজতন্ত্র বা অর্থনৈতিক ব্যবস্থার সমালোচনা নিয়ে আর্টিকেল লিখে নিজের চিন্তাধারা প্রকাশ করুন।

  4. গল্প লিখুন:
    দাস ক্যাপিটালের ধারণা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে একটি গল্প লিখুন। এটি আপনার সৃজনশীলতাকে নতুন মাত্রা দেবে।


উপসংহার

কার্ল মার্কসের দাস ক্যাপিটাল একটি বিপ্লবী রচনা যা অর্থনৈতিক এবং সামাজিক কাঠামোর গভীর বিশ্লেষণ প্রদান করে। এটি শুধুমাত্র একটি বই নয়; এটি একটি আদর্শ, যা যুগে যুগে শ্রমিক শ্রেণির মুক্তির জন্য অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে। যদিও মার্কসের তত্ত্বের কিছু সমালোচনা রয়েছে, তবে বর্তমান বিশ্বের পুঁজিবাদী সংকট এবং বৈষম্যের আলোচনায় দাস ক্যাপিটাল আজও সমানভাবে প্রাসঙ্গিক।

এই গ্রন্থটি আমাদের শেখায় কীভাবে শোষণের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হয় এবং সমাজের একটি সমতাভিত্তিক কাঠামো গড়ে তুলতে হয়। সুতরাং, দাস ক্যাপিটাল শুধু কার্ল মার্কসের রচনা নয়, এটি একটি ঐতিহাসিক এবং দার্শনিক ভিত্তি যা আমাদের ভবিষ্যৎ চিন্তাধারার দিক নির্দেশনা দেয়।

Like
Yay
8
Pesquisar
Patrocinado
Categorias
Leia mais
Local
কুমিল্লা সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান
ইতিহাস ও ঐতিহ্যের আলোকে কুমিল্লা বাংলাদেশের একটি প্রাচীন শহর এবং ঐতিহ্যবাহী জেলা। ত্রিপুরা নাম...
Por Knowledge Sharing Bangladesh 2024-12-04 11:49:26 0 2KB
Book Reviews & Literary Discussions
বই পড়ার অভ্যাস কিভাবে গড়ে তোলা যায়?
বই পড়া একটি চমৎকার অভ্যাস। এটি আমাদের জ্ঞান বৃদ্ধি করে, কল্পনাশক্তি বাড়ায় এবং মননশীলতা গড়ে তোলে।...
Por Razib Paul 2024-11-29 13:06:40 0 2KB
Tutorial
ডিজিটাল কনটেন্ট কিভাবে কম্পিউটারে সংরক্ষিত হয়?
বর্তমান যুগে আমরা প্রায় সব ধরনের কনটেন্ট ডিজিটাল ফরম্যাটে ব্যবহার করি। বই, সিনেমা, গান, ফটো,...
Por Book Club Bangladesh 2024-12-20 11:32:35 0 2KB
Literature
Exploring the Hidden Gems: A Guide to Independent Bookstores in Omaha
Nestled within the heart of the Midwest, Omaha, Nebraska, boasts a vibrant literary culture that...
Por Bookworm Omaha 2023-12-23 13:41:57 0 11KB
Books
ইন্টার সেকেন্ড ইয়ার বাংলা দ্বিতীয় পত্র বই
বাংলা ব্যাকরণ ও নির্মিতি দ্বিতীয় পত্র (একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি): উচ্চ মাধ্যমিকের সেরা সহায়ক গ্রন্থ...
Por WriteAhead Bangladesh 2024-11-28 12:31:31 0 2KB
AT Reads https://atreads.com