মাহাথির মোহাম্মদ: আধুনিক মালয়েশিয়ার রূপকার

"একজন চিকিৎসক যখন জাতির চিকিৎসক হয়ে ওঠেন, তখন তিনি শুধু রোগ নয়, রাষ্ট্রের ভবিষ্যতও নিরাময় করেন।" – এই কথাটি যেন মাহাথির মোহাম্মদের জীবনের জন্যই লেখা।
শৈশব ও বেড়ে ওঠা
১৯২৫ সালের ১০ জুলাই, মালয়েশিয়ার কেদাহ রাজ্যের ছোট্ট শহর আলোর সেতারে জন্মগ্রহণ করেন মাহাথির মোহাম্মদ। সাধারণ শিক্ষক পরিবারের সন্তান হলেও, তিনি বড় স্বপ্ন দেখতেন। ছাত্রজীবন থেকেই ছিলেন মেধাবী ও প্রজ্ঞাবান। চিকিৎসা বিজ্ঞানে পড়াশোনা শেষে একজন চিকিৎসক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন।
রাজনীতির মঞ্চে পদার্পণ
মাহাথির মোহাম্মদের রাজনীতিতে আগমন ছিল সময়ের দাবি এবং সমাজের প্রয়োজন থেকে উদ্ভূত। চিকিৎসা পেশায় সাফল্যের পাশাপাশি তিনি সবসময়ই সমাজের সমস্যা, জনগণের দুর্দশা ও দেশের ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তিত ছিলেন। দেশ তখন নানা সংকটে, নেতৃত্বের অভাব স্পষ্ট—এমন এক সময়ে তিনি রাজনীতির পথে পা রাখেন।
১৯৬৪ সালে তিনি ইউনাইটেড মালয় ন্যাশনাল অর্গানাইজেশন (UMNO) এর প্রার্থী হিসেবে কেদাহ রাজ্যের কোটা সেতার আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এটাই ছিল তার প্রথম আনুষ্ঠানিক পদক্ষেপ জাতীয় রাজনীতির পথে। তিনি স্বল্প সময়েই নিজের বিশ্লেষণী চিন্তাশক্তি, কঠোর পরিশ্রম এবং অটল আদর্শের কারণে দলের অভ্যন্তরে একজন চিন্তাশীল নেতা হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠেন।
১৯৬৯ সালের নির্বাচনের পর তিনি যখন সংসদে জায়গা হারান, তখনও তিনি থেমে যাননি। বরং সেই সময়েই তিনি “The Malay Dilemma” নামে একটি বই লেখেন, যেখানে তিনি মালয় জাতির অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক দুর্বলতা এবং তার সমাধানের প্রস্তাব তুলে ধরেন। যদিও এই বইটি তৎকালীন সরকার নিষিদ্ধ করেছিল, তারপরও এটি তাকে জনগণের মাঝে জনপ্রিয় করে তোলে এবং ১৯৭০-এর দশকে তিনি আবার রাজনীতিতে সক্রিয় হন।
১৯৭৪ সালে মাহাথির আবারো সংসদে ফিরেন এবং পরবর্তীতে শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেন। এরপর ১৯৭৬ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী তুন হুসেইন ওনের আমলে তিনি মালয়েশিয়ার উপপ্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত হন। এর মধ্য দিয়েই জাতির নেতৃত্বের ভার গ্রহণের জন্য তার প্রস্তুতি সম্পূর্ণ হয়।
অবশেষে ১৯৮১ সালে, মাহাথির মোহাম্মদ মালয়েশিয়ার চতুর্থ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। এ যেন রাজনীতিতে তার আত্মত্যাগ ও সংগ্রামের এক ন্যায্য পুরস্কার।
আধুনিকায়নের জনক
দীর্ঘ ২২ বছরের শাসনামলে মাহাথির মোহাম্মদ মালয়েশিয়াকে একটি কৃষিনির্ভর দেশ থেকে আধুনিক শিল্পোন্নত অর্থনীতিতে রূপান্তর করেন। প্রোটন কার তৈরি, পুত্রজায়া শহরের পরিকল্পনা, মালয়েশিয়া টাওয়ার, হাইওয়ে নেটওয়ার্ক—সবকিছুই তার দূরদৃষ্টিসম্পন্ন নেতৃত্বের ফল।
তার "Look East Policy" জাপান ও কোরিয়ার আদলে উন্নয়নের পথ দেখিয়েছিল মালয়েশিয়াকে। অর্থনৈতিক সংকটের সময় IMF-এর সহায়তা না নিয়ে নিজের কৌশল কাজে লাগিয়ে তিনি প্রমাণ করেন, আত্মনির্ভরতা ও সাহসিকতা কতটা কার্যকর হতে পারে।
রাজনীতিতে দ্বিতীয় ইনিংস
২০০৩ সালে অবসর নিলেও রাজনীতি থেকে দূরে থাকতে পারেননি। দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করতে ২০১৮ সালে ৯২ বছর বয়সে আবার প্রধানমন্ত্রী হন—বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ইতিহাস গড়েন। জনগণ তখনও তার ওপর আস্থা রেখেছিল, এবং মাহাথির আবারও নেতৃত্ব দেন এক নতুন পরিবর্তনের।
এক অনন্য ব্যক্তিত্ব
মাহাথির মোহাম্মদ শুধু একজন রাজনীতিবিদ নন, তিনি একজন চিন্তক, লেখক ও দূরদর্শী নেতা। তাঁর আত্মজীবনী "A Doctor in the House" তার জীবনের দর্শন, সংগ্রাম ও অর্জনের দলিল। তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে দীর্ঘ দাম্পত্য জীবন, সাত সন্তান এবং জাতির প্রতি অটুট ভালোবাসা তাকে একজন পূর্ণাঙ্গ মানুষে পরিণত করেছে।
মাহাথির মোহাম্মদ আমাদের শেখান— ✅ বয়স কোনো বাধা নয়,
✅ সাহসী সিদ্ধান্ত নিতে জানতে হয়,
✅ নেতৃত্ব মানে ভবিষ্যতের জন্য পরিকল্পনা করা।
আজকের বিশ্বে যেখানে নেতৃত্বের সংকট বিরাজমান, মাহাথির আমাদের মনে করিয়ে দেন – একজন ভালো নেতা কীভাবে একটি জাতিকে বদলে দিতে পারেন।
- Book Reviews & Literary Discussions
- Writing
- Reading List
- Arts and Entertainment
- Personal Development
- Storytelling
- Startup
- Books
- Biography
- Dance
- Drinks
- Entertainment & Pop Culture
- Health & Fitness
- Education & Learning
- Food & Cooking
- Games
- Gardening
- Self-Care & Mental Health
- Home Decor & DIY
- Literature
- Music
- Networking
- Other
- Party
- Philosophy and Religion
- Place
- Shopping
- Relationships & Dating
- Sports
- Theater
- lifestyles & hobbies/shutterbugs
- Lifelong Learning
- Tutorial
- Announcement
- Inspirational Stories & Motivation