• সোনালী ব্যাংকের চেক বই লেখার নিয়ম

    চেক একটি গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক দলিল, যা একজন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ অন্য ব্যক্তিকে প্রদান করতে ব্যবহৃত হয়। সোনালী ব্যাংক বাংলাদেশের অন্যতম প্রাচীন এবং গুরুত্বপূর্ণ একটি ব্যাংক। সোনালী ব্যাংকের গ্রাহকরা চেক ব্যবহারের মাধ্যমে অর্থ লেনদেনের সুবিধা গ্রহণ করতে পারেন। তবে চেক লেখার সময় নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম এবং সতর্কতা অনুসরণ করা জরুরি, কারণ একটি ছোট ভুলের ফলে চেক অকার্যকর হতে পারে বা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হতে পারে।

    এই রচনায় সোনালী ব্যাংকের চেক বই ব্যবহারের নিয়ম ও চেক লেখার পদ্ধতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

    চেক বই সংগ্রহের পদ্ধতি

    সোনালী ব্যাংক থেকে চেক বই পেতে হলে প্রথমে ব্যাংকের শাখায় যোগাযোগ করতে হয়। নিচে চেক বই সংগ্রহের প্রক্রিয়া উল্লেখ করা হলো:

    1. অ্যাকাউন্ট খোলার সময় চেক বইয়ের আবেদন:
    নতুন গ্রাহক অ্যাকাউন্ট খোলার সময় চেক বইয়ের আবেদন করতে পারেন। ব্যাংক নির্ধারিত একটি ফর্ম পূরণ করে জমা দিতে হয়।

    2. চেক বই পুনর্নবীকরণ:
    চেক বই শেষ হয়ে গেলে বা নতুন চেক বইয়ের প্রয়োজন হলে ব্যাংকের শাখায় আবেদন করতে হয়। সেক্ষেত্রে পুরোনো চেক বইয়ের শেষাংশ সংযুক্ত থাকতে হবে।

    3. পরিচয়পত্র প্রদান:
    চেক বই সংগ্রহের সময় গ্রাহকের সঠিক পরিচয় নিশ্চিত করার জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র বা অন্যান্য প্রমাণপত্র প্রদর্শন করতে হতে পারে।

    সোনালী ব্যাংকের চেক লেখার নিয়ম

    সঠিকভাবে চেক লেখার জন্য কিছু নিয়ম মেনে চলা প্রয়োজন। নিচে ধাপে ধাপে চেক লেখার পদ্ধতি বর্ণনা করা হলো:

    ১. চেক লেখার তারিখ
    চেকের উপরের ডানদিকে নির্ধারিত স্থানে সঠিক তারিখ লিখতে হবে। তারিখটি সাধারণত **দিন/মাস/বছর** (dd/mm/yyyy) বিন্যাসে লেখা হয়। ভবিষ্যতের তারিখ দিয়ে লেখা চেককে **পোস্ট-ডেটেড চেক** বলা হয়, যা সেই তারিখে নগদায়িত হবে।

    ২. প্রাপকের নাম
    চেকের "Pay to the order of" বা "প্রাপকের নাম" অংশে যে ব্যক্তিকে অর্থ প্রদান করা হবে তার নাম স্পষ্ট এবং নির্ভুলভাবে লিখতে হবে। ভুল নাম বা অস্পষ্ট লেখার কারণে চেক অকার্যকর হতে পারে।

    ৩. অঙ্ক লিখন
    - চেকের নির্ধারিত অংশে টাকার পরিমাণ অঙ্কে লিখতে হবে।
    - অঙ্কের আগে এবং পরে কোনো খালি জায়গা রাখা উচিত নয়। উদাহরণস্বরূপ: **"৳৫,০০০"**।
    - চেকের নির্ধারিত লাইনে টাকার পরিমাণ কথায় লিখতে হয়। যেমন: "Five thousand taka only"।

    ৪. হিসাব নম্বর উল্লেখ (প্রয়োজনে)
    কিছু ক্ষেত্রে চেকের পেছনে বা নির্ধারিত স্থানে গ্রাহকের অ্যাকাউন্ট নম্বর উল্লেখ করতে হতে পারে।

    ৫. স্বাক্ষর
    চেকের নিচে নির্ধারিত স্থানে অ্যাকাউন্টধারীর স্বাক্ষর করতে হবে। এটি অবশ্যই ব্যাংকের রেকর্ডে থাকা স্বাক্ষরের সঙ্গে মিলতে হবে।

    চেক লেখার সময় সতর্কতা

    সঠিকভাবে চেক লেখার পাশাপাশি কয়েকটি বিষয় মাথায় রাখা উচিত:

    1. কাটা বা মুছা না করা:
    চেক লেখার সময় কোনো কাটাকাটি বা মুছে দেওয়া যাবে না। এতে চেক অকার্যকর হতে পারে।

    2. খালি জায়গা পূরণ করা:
    চেকের লাইনগুলোতে কোনো ফাঁকা জায়গা রাখা উচিত নয়, কারণ ফাঁকা জায়গা থাকলে চেক জালিয়াতির ঝুঁকি বাড়ে।

    3. স্বাক্ষর পরীক্ষা করা:
    স্বাক্ষর অবশ্যই স্পষ্ট এবং ব্যাংকে সংরক্ষিত নমুনা স্বাক্ষরের সঙ্গে মিলে যেতে হবে।

    4. সুরক্ষা ব্যবস্থাপনা:
    চেক বই সর্বদা নিরাপদ স্থানে রাখা উচিত। হারিয়ে গেলে অবিলম্বে ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে অবহিত করতে হবে।

    চেক জমা দেওয়ার পদ্ধতি

    সোনালী ব্যাংকের চেকের মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করার জন্য কিছু ধাপ অনুসরণ করতে হয়:

    1. ব্যাংকে জমা দেওয়া:
    চেক প্রাপকের অ্যাকাউন্টে জমা দেওয়ার জন্য সোনালী ব্যাংকের নির্ধারিত জমা স্লিপ পূরণ করতে হয়।

    2. সময়সীমা:
    চেক জমা দেওয়ার পর অর্থ প্রক্রিয়াজাত করতে সাধারণত ২-৩ কার্যদিবস সময় লাগে। তবে, অনলাইনে সংযুক্ত শাখাগুলোর ক্ষেত্রে সময় কম লাগে।

    3. চেকের মেয়াদ:
    একটি চেক সাধারণত তিন মাসের জন্য বৈধ। এর পর চেকটি বাতিল বলে গণ্য হয়।

    ডিজিটাল চেক সিস্টেমের সুবিধা

    বর্তমানে সোনালী ব্যাংক ডিজিটাল চেক ক্লিয়ারিং সিস্টেমে কাজ করছে, যা গ্রাহকদের জন্য সময় এবং শ্রম সাশ্রয় করে। এতে চেকের বৈধতা ও নিরাপত্তা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।

    চেক ব্যবহারে সাধারণ সমস্যা এবং সমাধান

    চেক ব্যবহারের সময় বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে। কিছু সাধারণ সমস্যার সমাধান নিচে উল্লেখ করা হলো:

    1. ভুল তথ্য প্রদান:
    ভুল নাম বা অঙ্ক লেখার কারণে চেক বাতিল হতে পারে। তাই চেক জমা দেওয়ার আগে তথ্য যাচাই করা উচিত।

    2. স্বাক্ষরের মিল না থাকা:
    স্বাক্ষর না মিললে চেক ফেরত আসতে পারে। এ ক্ষেত্রে ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ করে নমুনা স্বাক্ষর আপডেট করা উচিত।

    3. জালিয়াতি প্রতিরোধ:
    চেক লেখার পর সঠিকভাবে তথ্য পূরণ এবং খালি স্থান পূর্ণ করে জালিয়াতি প্রতিরোধ করা যায়।

    উপসংহার

    সোনালী ব্যাংকের চেক বই ব্যবহারের নিয়ম এবং চেক লেখার সঠিক পদ্ধতি জানলে গ্রাহকদের অর্থ লেনদেন আরও সহজ এবং নিরাপদ হয়। এটি শুধু একটি আর্থিক দলিল নয়, বরং গ্রাহকের আর্থিক দায়িত্বের প্রতিফলন। চেক লেখার সময় সঠিক নিয়ম মেনে চলা জরুরি, কারণ এটি গ্রাহকের বিশ্বাসযোগ্যতা এবং নিরাপত্তার সঙ্গে সম্পর্কিত।

    আর্থিক লেনদেনে সোনালী ব্যাংকের চেক একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম, যা সঠিকভাবে ব্যবহার করলে গ্রাহকদের সময়, শ্রম, এবং অর্থ বাঁচাতে সাহায্য করে। সঠিক চেক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে আর্থিক লেনদেন আরও সহজ ও নিরাপদ করা সম্ভব।
    সোনালী ব্যাংকের চেক বই লেখার নিয়ম চেক একটি গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক দলিল, যা একজন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ অন্য ব্যক্তিকে প্রদান করতে ব্যবহৃত হয়। সোনালী ব্যাংক বাংলাদেশের অন্যতম প্রাচীন এবং গুরুত্বপূর্ণ একটি ব্যাংক। সোনালী ব্যাংকের গ্রাহকরা চেক ব্যবহারের মাধ্যমে অর্থ লেনদেনের সুবিধা গ্রহণ করতে পারেন। তবে চেক লেখার সময় নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম এবং সতর্কতা অনুসরণ করা জরুরি, কারণ একটি ছোট ভুলের ফলে চেক অকার্যকর হতে পারে বা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হতে পারে। এই রচনায় সোনালী ব্যাংকের চেক বই ব্যবহারের নিয়ম ও চেক লেখার পদ্ধতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো। চেক বই সংগ্রহের পদ্ধতি সোনালী ব্যাংক থেকে চেক বই পেতে হলে প্রথমে ব্যাংকের শাখায় যোগাযোগ করতে হয়। নিচে চেক বই সংগ্রহের প্রক্রিয়া উল্লেখ করা হলো: 1. অ্যাকাউন্ট খোলার সময় চেক বইয়ের আবেদন: নতুন গ্রাহক অ্যাকাউন্ট খোলার সময় চেক বইয়ের আবেদন করতে পারেন। ব্যাংক নির্ধারিত একটি ফর্ম পূরণ করে জমা দিতে হয়। 2. চেক বই পুনর্নবীকরণ: চেক বই শেষ হয়ে গেলে বা নতুন চেক বইয়ের প্রয়োজন হলে ব্যাংকের শাখায় আবেদন করতে হয়। সেক্ষেত্রে পুরোনো চেক বইয়ের শেষাংশ সংযুক্ত থাকতে হবে। 3. পরিচয়পত্র প্রদান: চেক বই সংগ্রহের সময় গ্রাহকের সঠিক পরিচয় নিশ্চিত করার জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র বা অন্যান্য প্রমাণপত্র প্রদর্শন করতে হতে পারে। সোনালী ব্যাংকের চেক লেখার নিয়ম সঠিকভাবে চেক লেখার জন্য কিছু নিয়ম মেনে চলা প্রয়োজন। নিচে ধাপে ধাপে চেক লেখার পদ্ধতি বর্ণনা করা হলো: ১. চেক লেখার তারিখ চেকের উপরের ডানদিকে নির্ধারিত স্থানে সঠিক তারিখ লিখতে হবে। তারিখটি সাধারণত **দিন/মাস/বছর** (dd/mm/yyyy) বিন্যাসে লেখা হয়। ভবিষ্যতের তারিখ দিয়ে লেখা চেককে **পোস্ট-ডেটেড চেক** বলা হয়, যা সেই তারিখে নগদায়িত হবে। ২. প্রাপকের নাম চেকের "Pay to the order of" বা "প্রাপকের নাম" অংশে যে ব্যক্তিকে অর্থ প্রদান করা হবে তার নাম স্পষ্ট এবং নির্ভুলভাবে লিখতে হবে। ভুল নাম বা অস্পষ্ট লেখার কারণে চেক অকার্যকর হতে পারে। ৩. অঙ্ক লিখন - চেকের নির্ধারিত অংশে টাকার পরিমাণ অঙ্কে লিখতে হবে। - অঙ্কের আগে এবং পরে কোনো খালি জায়গা রাখা উচিত নয়। উদাহরণস্বরূপ: **"৳৫,০০০"**। - চেকের নির্ধারিত লাইনে টাকার পরিমাণ কথায় লিখতে হয়। যেমন: "Five thousand taka only"। ৪. হিসাব নম্বর উল্লেখ (প্রয়োজনে) কিছু ক্ষেত্রে চেকের পেছনে বা নির্ধারিত স্থানে গ্রাহকের অ্যাকাউন্ট নম্বর উল্লেখ করতে হতে পারে। ৫. স্বাক্ষর চেকের নিচে নির্ধারিত স্থানে অ্যাকাউন্টধারীর স্বাক্ষর করতে হবে। এটি অবশ্যই ব্যাংকের রেকর্ডে থাকা স্বাক্ষরের সঙ্গে মিলতে হবে। চেক লেখার সময় সতর্কতা সঠিকভাবে চেক লেখার পাশাপাশি কয়েকটি বিষয় মাথায় রাখা উচিত: 1. কাটা বা মুছা না করা: চেক লেখার সময় কোনো কাটাকাটি বা মুছে দেওয়া যাবে না। এতে চেক অকার্যকর হতে পারে। 2. খালি জায়গা পূরণ করা: চেকের লাইনগুলোতে কোনো ফাঁকা জায়গা রাখা উচিত নয়, কারণ ফাঁকা জায়গা থাকলে চেক জালিয়াতির ঝুঁকি বাড়ে। 3. স্বাক্ষর পরীক্ষা করা: স্বাক্ষর অবশ্যই স্পষ্ট এবং ব্যাংকে সংরক্ষিত নমুনা স্বাক্ষরের সঙ্গে মিলে যেতে হবে। 4. সুরক্ষা ব্যবস্থাপনা: চেক বই সর্বদা নিরাপদ স্থানে রাখা উচিত। হারিয়ে গেলে অবিলম্বে ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে অবহিত করতে হবে। চেক জমা দেওয়ার পদ্ধতি সোনালী ব্যাংকের চেকের মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করার জন্য কিছু ধাপ অনুসরণ করতে হয়: 1. ব্যাংকে জমা দেওয়া: চেক প্রাপকের অ্যাকাউন্টে জমা দেওয়ার জন্য সোনালী ব্যাংকের নির্ধারিত জমা স্লিপ পূরণ করতে হয়। 2. সময়সীমা: চেক জমা দেওয়ার পর অর্থ প্রক্রিয়াজাত করতে সাধারণত ২-৩ কার্যদিবস সময় লাগে। তবে, অনলাইনে সংযুক্ত শাখাগুলোর ক্ষেত্রে সময় কম লাগে। 3. চেকের মেয়াদ: একটি চেক সাধারণত তিন মাসের জন্য বৈধ। এর পর চেকটি বাতিল বলে গণ্য হয়। ডিজিটাল চেক সিস্টেমের সুবিধা বর্তমানে সোনালী ব্যাংক ডিজিটাল চেক ক্লিয়ারিং সিস্টেমে কাজ করছে, যা গ্রাহকদের জন্য সময় এবং শ্রম সাশ্রয় করে। এতে চেকের বৈধতা ও নিরাপত্তা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। চেক ব্যবহারে সাধারণ সমস্যা এবং সমাধান চেক ব্যবহারের সময় বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে। কিছু সাধারণ সমস্যার সমাধান নিচে উল্লেখ করা হলো: 1. ভুল তথ্য প্রদান: ভুল নাম বা অঙ্ক লেখার কারণে চেক বাতিল হতে পারে। তাই চেক জমা দেওয়ার আগে তথ্য যাচাই করা উচিত। 2. স্বাক্ষরের মিল না থাকা: স্বাক্ষর না মিললে চেক ফেরত আসতে পারে। এ ক্ষেত্রে ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ করে নমুনা স্বাক্ষর আপডেট করা উচিত। 3. জালিয়াতি প্রতিরোধ: চেক লেখার পর সঠিকভাবে তথ্য পূরণ এবং খালি স্থান পূর্ণ করে জালিয়াতি প্রতিরোধ করা যায়। উপসংহার সোনালী ব্যাংকের চেক বই ব্যবহারের নিয়ম এবং চেক লেখার সঠিক পদ্ধতি জানলে গ্রাহকদের অর্থ লেনদেন আরও সহজ এবং নিরাপদ হয়। এটি শুধু একটি আর্থিক দলিল নয়, বরং গ্রাহকের আর্থিক দায়িত্বের প্রতিফলন। চেক লেখার সময় সঠিক নিয়ম মেনে চলা জরুরি, কারণ এটি গ্রাহকের বিশ্বাসযোগ্যতা এবং নিরাপত্তার সঙ্গে সম্পর্কিত। আর্থিক লেনদেনে সোনালী ব্যাংকের চেক একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম, যা সঠিকভাবে ব্যবহার করলে গ্রাহকদের সময়, শ্রম, এবং অর্থ বাঁচাতে সাহায্য করে। সঠিক চেক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে আর্থিক লেনদেন আরও সহজ ও নিরাপদ করা সম্ভব।
    Love
    1
    0 Комментарии 0 Поделились 1Кб Просмотры 0 предпросмотр
  • ক্ষিতিমোহন সেনের মতে, সাহিত্য সংগ্রহের পথিকৃৎ বাংলার মাটিতে, যেখানে প্রায় হাজার বছর আগে বৌদ্ধ পণ্ডিত বিদ্যাধর সংকলিত করেন শতাধিক কবির কবিতা নিয়ে "কবীন্দ্রবচনসমুচ্চয়"। পরবর্তীতে, শ্রীধরদাসের "সদুক্তিকর্ণামৃত" (১২০৫ খ্রিষ্টাব্দ) এবং ষোলো শতকে শ্রীরূপ গোস্বামীর "পদ্যাবলী"তে ভক্ত কবিদের রচনা সংগ্রহ করেন। এই ধারাবাহিকতায় ১৮৮৫ সালে রবীন্দ্রনাথ "পদরত্নাবলী" সম্পাদনা করেন। রবীন্দ্রনাথের মতে, বাংলা সাহিত্যে সংকলনের ধারা এক বিশেষ বৈশিষ্ট্য।

    সম্প্রতি প্রকাশিত অরুণাভ সিংহের সম্পাদিত "দ্য পেঙ্গুইন বুক অব বেঙ্গলি শর্ট স্টোরিজ়" এই ঐতিহ্যেরই অংশ, যেখানে ৩৭টি গল্প বেছে নেওয়া হয়েছে প্রায় ১৩২ বছরের সময়কাল থেকে। বইটি শুরু হয়েছে রবীন্দ্রনাথের "ঘাটের কথা" দিয়ে, যা আধুনিক বাংলা ছোটগল্পের সূচনাপর্ব বলে মানা হয়। রবীন্দ্রনাথের এই গল্প বিধবা কুসুমের প্রেমকাহিনীকে কেন্দ্র করে রচিত, যা ১৮৮৪ সালে প্রকাশিত হয়। উনিশ শতকের সামাজিক পরিবর্তন এবং বিশ শতকে রাজনৈতিক আন্দোলনের প্রভাব বইটির মূল উপজীব্য হয়ে উঠেছে।

    অরুণাভ সিংহের ভূমিকা থেকে জানা যায়, এই সংগ্রহে ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলন, মার্ক্সবাদী সাহিত্য আন্দোলন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গা এবং দেশভাগের পরবর্তী কালের গল্প স্থান পেয়েছে। বইটিতে পূর্ব পাকিস্তানের ভাষা আন্দোলন এবং স্বাধীন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কেও গল্প সংযোজন করা হয়েছে, যা এই সংগ্রহের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য।

    বাংলা গল্পের নির্মাণশৈলী এবং ভঙ্গিমার নানা দিককেও এখানে আলোচিত হয়েছে। ষাটের দশকে সমাজের পরিবর্তনের সাথে সাথে লেখকরা তাদের গল্পের কাহিনি ও রীতিতেও পরিবর্তন আনেন। অরুণাভ সিংহ এই ভূমিকায় উল্লেখ করেন, কাহিনি শৈলীকে কেন্দ্র করে কথাসাহিত্য কীভাবে নতুন আঙ্গিকে বিকশিত হয়েছে, বিশেষ করে ষাট-সত্তরের দশকে নকশাল আন্দোলনের সময়কালে। গল্পগুলোতে সেই সময়ের আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের ছাপ স্পষ্ট, যা গল্পের ঘটনাবিন্যাস এবং চরিত্রগুলোতে ফুটে ওঠে।

    তবে, এই সংগ্রহের গল্পগুলো প্রধানত সম্পাদক অরুণাভ সিংহের ব্যক্তিগত পছন্দ থেকে নির্বাচিত, এবং তিনি কোন বিশেষ নীতির অনুসরণ করেননি বলে উল্লেখ করেছেন। বইটির সূচনা হয়েছে রবীন্দ্রনাথ থেকে এবং সমাপ্তি সঙ্গীতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গল্পে।

    গল্প সংকলনে শরৎচন্দ্র, বুদ্ধদেব বসু, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, মহাশ্বেতা দেবীর মতো পরিচিত লেখকদের জনপ্রিয় কিছু গল্প স্থান পেয়েছে, যা বাংলা গল্প সংগ্রহের ধারায় পরিচিত ও প্রতিষ্ঠিত কাহিনিগুলোকেই অনুসরণ করে। এ সংকলনে পুরনো ও নতুন গল্পের সংমিশ্রণ হলেও কিছু আধুনিক রচনার অভাব রয়েছে।

    সম্পাদনায় কিছু তথ্যে অসঙ্গতি লক্ষ করা যায়, যেমন বঙ্কিমচন্দ্রের "দুর্গেশনন্দিনী"কে প্রথম বাংলা উপন্যাস বলা হলেও প্যারীচাঁদ মিত্রের "আলালের ঘরের দুলাল"ই আদতে বাংলা সাহিত্যের প্রথম উপন্যাস হিসেবে গৃহীত। একইভাবে, রবীন্দ্রনাথের সৃষ্ট গানের সংখ্যা উল্লেখ করা হয়েছে, যা বাস্তবে সামান্য কম।

    বইটির প্রচ্ছদে বিনোদবিহারী মুখোপাধ্যায়ের কোলাজ ব্যবহৃত হয়েছে যা একে দৃষ্টিনন্দন রূপ দিয়েছে। এই সংগ্রহটি বাঙালি ও অবাঙালি পাঠকদের জন্য বাংলা সাহিত্যের ঐতিহ্য ও পরিবর্তনের এক চমৎকার উপলব্ধি এনে দেয়। অরুণাভ সিংহের অনুবাদ দক্ষতা বইটির অন্যতম প্রভাবশালী দিক, যেখানে ৩৭টি গল্পের মধ্যে ৩২টি তার অনূদিত।
    #bookwormbangladesh
    ক্ষিতিমোহন সেনের মতে, সাহিত্য সংগ্রহের পথিকৃৎ বাংলার মাটিতে, যেখানে প্রায় হাজার বছর আগে বৌদ্ধ পণ্ডিত বিদ্যাধর সংকলিত করেন শতাধিক কবির কবিতা নিয়ে "কবীন্দ্রবচনসমুচ্চয়"। পরবর্তীতে, শ্রীধরদাসের "সদুক্তিকর্ণামৃত" (১২০৫ খ্রিষ্টাব্দ) এবং ষোলো শতকে শ্রীরূপ গোস্বামীর "পদ্যাবলী"তে ভক্ত কবিদের রচনা সংগ্রহ করেন। এই ধারাবাহিকতায় ১৮৮৫ সালে রবীন্দ্রনাথ "পদরত্নাবলী" সম্পাদনা করেন। রবীন্দ্রনাথের মতে, বাংলা সাহিত্যে সংকলনের ধারা এক বিশেষ বৈশিষ্ট্য। সম্প্রতি প্রকাশিত অরুণাভ সিংহের সম্পাদিত "দ্য পেঙ্গুইন বুক অব বেঙ্গলি শর্ট স্টোরিজ়" এই ঐতিহ্যেরই অংশ, যেখানে ৩৭টি গল্প বেছে নেওয়া হয়েছে প্রায় ১৩২ বছরের সময়কাল থেকে। বইটি শুরু হয়েছে রবীন্দ্রনাথের "ঘাটের কথা" দিয়ে, যা আধুনিক বাংলা ছোটগল্পের সূচনাপর্ব বলে মানা হয়। রবীন্দ্রনাথের এই গল্প বিধবা কুসুমের প্রেমকাহিনীকে কেন্দ্র করে রচিত, যা ১৮৮৪ সালে প্রকাশিত হয়। উনিশ শতকের সামাজিক পরিবর্তন এবং বিশ শতকে রাজনৈতিক আন্দোলনের প্রভাব বইটির মূল উপজীব্য হয়ে উঠেছে। অরুণাভ সিংহের ভূমিকা থেকে জানা যায়, এই সংগ্রহে ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলন, মার্ক্সবাদী সাহিত্য আন্দোলন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গা এবং দেশভাগের পরবর্তী কালের গল্প স্থান পেয়েছে। বইটিতে পূর্ব পাকিস্তানের ভাষা আন্দোলন এবং স্বাধীন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কেও গল্প সংযোজন করা হয়েছে, যা এই সংগ্রহের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। বাংলা গল্পের নির্মাণশৈলী এবং ভঙ্গিমার নানা দিককেও এখানে আলোচিত হয়েছে। ষাটের দশকে সমাজের পরিবর্তনের সাথে সাথে লেখকরা তাদের গল্পের কাহিনি ও রীতিতেও পরিবর্তন আনেন। অরুণাভ সিংহ এই ভূমিকায় উল্লেখ করেন, কাহিনি শৈলীকে কেন্দ্র করে কথাসাহিত্য কীভাবে নতুন আঙ্গিকে বিকশিত হয়েছে, বিশেষ করে ষাট-সত্তরের দশকে নকশাল আন্দোলনের সময়কালে। গল্পগুলোতে সেই সময়ের আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের ছাপ স্পষ্ট, যা গল্পের ঘটনাবিন্যাস এবং চরিত্রগুলোতে ফুটে ওঠে। তবে, এই সংগ্রহের গল্পগুলো প্রধানত সম্পাদক অরুণাভ সিংহের ব্যক্তিগত পছন্দ থেকে নির্বাচিত, এবং তিনি কোন বিশেষ নীতির অনুসরণ করেননি বলে উল্লেখ করেছেন। বইটির সূচনা হয়েছে রবীন্দ্রনাথ থেকে এবং সমাপ্তি সঙ্গীতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গল্পে। গল্প সংকলনে শরৎচন্দ্র, বুদ্ধদেব বসু, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, মহাশ্বেতা দেবীর মতো পরিচিত লেখকদের জনপ্রিয় কিছু গল্প স্থান পেয়েছে, যা বাংলা গল্প সংগ্রহের ধারায় পরিচিত ও প্রতিষ্ঠিত কাহিনিগুলোকেই অনুসরণ করে। এ সংকলনে পুরনো ও নতুন গল্পের সংমিশ্রণ হলেও কিছু আধুনিক রচনার অভাব রয়েছে। সম্পাদনায় কিছু তথ্যে অসঙ্গতি লক্ষ করা যায়, যেমন বঙ্কিমচন্দ্রের "দুর্গেশনন্দিনী"কে প্রথম বাংলা উপন্যাস বলা হলেও প্যারীচাঁদ মিত্রের "আলালের ঘরের দুলাল"ই আদতে বাংলা সাহিত্যের প্রথম উপন্যাস হিসেবে গৃহীত। একইভাবে, রবীন্দ্রনাথের সৃষ্ট গানের সংখ্যা উল্লেখ করা হয়েছে, যা বাস্তবে সামান্য কম। বইটির প্রচ্ছদে বিনোদবিহারী মুখোপাধ্যায়ের কোলাজ ব্যবহৃত হয়েছে যা একে দৃষ্টিনন্দন রূপ দিয়েছে। এই সংগ্রহটি বাঙালি ও অবাঙালি পাঠকদের জন্য বাংলা সাহিত্যের ঐতিহ্য ও পরিবর্তনের এক চমৎকার উপলব্ধি এনে দেয়। অরুণাভ সিংহের অনুবাদ দক্ষতা বইটির অন্যতম প্রভাবশালী দিক, যেখানে ৩৭টি গল্পের মধ্যে ৩২টি তার অনূদিত। #bookwormbangladesh
    Love
    1
    0 Комментарии 0 Поделились 2Кб Просмотры 0 предпросмотр
AT Reads https://atreads.com